শরীয়তপুর প্রতিনিধি :শরীয়তপুরের জাজিরায় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৪ জনকে এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। জাজিরা থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো দ্বন্দ্বের জের ধরে জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি গ্রামের মৃত আমির হোসেন হাওলাদারের ছেলে আল আমিন হাওলাদার (২৪) কে বাড়ির সামনে রাস্তায় একা পেয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ সোনামুদ্দিন হওলাদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হাওলাদার, আলমগীর হাওলাদার, আনু ভেন্ডার, রব হাওলাদার, আক্তার হাওলাদার, বিল্লাল হোসেন ও নূর হোসেনসহ ১৫-২০জন সন্ত্রাসী । আজ রবিবার বেলা ১ টার দিকে এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর যাবৎ দুই -পক্ষের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। একই দ্বন্দ্বে ২০১১ সালে ওই গ্রামের রুপাই হাওলাদারের ছেলে স্বপন হাওলাদারকে টেঁটা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা হরেছিল সোনামুদ্দিন হাওলাদারের ছেলেরা। স্বপন হত্যার পর তার স্বজনেরা থানায় মামলা করলে গত কয়েক বছর যাবতই মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিল জাহাঙ্গীর হাওলাদার গং। অন্যথায় আরো অনেককে হত্যা করারও হুমকি দেয় তারা। এই ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই পুরোনো দ্বন্দ্ব আবার মাথাচারা দিয়ে উঠলে এরাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।

জাহাঙ্গীর-আলমগীর গং বেশ কিছুদিন আগে থেকেই জাজিরা ইউনিয়ন শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নিহত আল আমিনের চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান হাওলাদারকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। রহমানকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা খুন করে আল আমিনকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুকবার আল আমিন ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির কাছে একটি দোকানে মোবইল ফোনে চার্জ দিতে রওনা হলে পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী চক্র রাস্তার উপর আল আমিনকে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত হরে করে। আল আমিনের ডাক চিৎকারে এলাকার লোক এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। এলাকার লোকজন আল আমিনকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

জাজিরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আল আমিনের ঘাড়, পিঠ, উরু ও হাতে ৪/৫ টি কোপের ক্ষত রয়েছে। এছারাও অসংখ্য আঘাত করা হয়েছে তার শরীরে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনেই আল আমিনের মৃত্যু হয়েছে।

আল আমিনের চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীরা চার বছর আগে আমার ভাতিজা স্বপন হাওলাদারকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। সেই খুনের কোন বিচার আমরা পাইনি। ওরা আমাকেও হত্যা করার জন্য কয়েকদিন থেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। আমার চাচাতো ভাই আল আমিন ঢাকার নবাবগঞ্জে রং এর ব্যবসা করতো । ঈদের আগে বাড়িতে এসে সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনার কথা শুনে আমাকে সতর্কভাবে থাকতে পরামর্শ দেয় আল আমিন। আমাকে না পেয়ে আমার নিরহ ভাইটিকে ওরা হত্যা করলো। আমি এই খুনদের বিচার চাই।

জাজিরা ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন থেকেই হাওলাদার কান্দি গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। রবিবার বিকেলে আমরা বিষয়টি মিমাংসার জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু তার আগেই একটি নিষ্পাপ ছেলেকে মির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এই হত্যাকান্ডের আইনানুগ বিচার হোক এটা আমি চাই।

আল আমিনের মা কুলসুম বেগম (৬৫) বলেন, আমার বুকের মানিক কোন দিন কারো ক্ষতি করে নাই। গ্রামের কোন দলাদলির সাথেও ছিলনা। ঢাকা ব্যবসা করতো। ঈদের পরে ওকে আমরা বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্রী খুজছিলাম। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার কাছ থেকে আমার মানিককে কেড়ে নিল। ওরা আরো অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকান্ডের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। সেখান থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে জাহাঙ্গীর হাওলার, ভেন্ডার আনু মাদবর, বিল্লাল হোসেন ও নূর হোসেনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।


(কেএনআই/এসসি/জুলাই১৯,২০১৫)