তাড়াশ প্রতিনিধিঃ হাতের মেহেদীর রং না শুকাতেই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের মাদারজানি গ্রামের মনিরুল ইসলাম মনি (২৩)। ভুল চিকিৎসায় রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে দাবী করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালের কর্তপক্ষ ও ডাক্তারের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবী করা হয়েছে।

নিহত পরিবার সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাদারজানি গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছোট ছেলে সদ্য বিবাহিত মাওলানা মনিরুল ইসলাম মনির গত বুধবার সন্ধ্যায় পেটে ব্যথ্যা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে তাড়াশ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক ভাবে ধারনা করে তার এ্যাপেন্ডিসাইট হয়েছে এবং তাকে অপারেশন করতে হবে। তাড়াশ হাসপাতালে অপারেশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রোগীর আত্মীয়স্বজনরা তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি না করে সিরাজগঞ্জ মুজিব সড়কের অবস্থিত কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেও প্রাথমিক ভাবে এ্যাপেন্ডিসাইট হয়েছে ধারনা করে রাতেই তাকে অপারেশন করে ডাক্তার রুহুল আমিন তালুকদার। অপারেশনের পুর্বে অজ্ঞান করার এ্যান্সেথেসিয়া ইনজেকশান দেওয়ার ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের পরিচালক হারুন নিজেই এ্যান্সেথেসিয়া (চেতনানাশক) ইনজেকশান করে। অপারেশন শেষে রোগীকে বেডে নিয়ে আসার কিছুক্ষন পর রাত ১২টার দিকে রোগীর ঝাকুনী শুরু হয়। কর্তব্যরত কোন ডাক্তার না থাকায় রোগীর লোকজন নার্সকে বারবার বলার পর ডিউটিতে থাকা নার্স ওই রোগীকে একটা ইনজেকশান ও একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। ঔষধ ও ইনজেকশন দেওয়ার পরে রোগী ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পরে। রোগীর লোকজন কান্নাকাটি শুরু করিলে কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসে। রোগীর অবস্থার অবনতির হয়েছে ভেবে তাকে দ্রুত এনায়েতপুর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। রোগীর লোকজন রাতেই এ্যাবুলেন্স ঠিক করতেই রোগী মনিরুল ইসলাম মনি হাসপাতালেই রাত ৩টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

রোগীর আত্মীয়স্বজনরা জানান, এ্যাপেন্ডিসাইট অপারেশনে কখনো রোগী মারা যেতে পারেনা। তারা প্রতিবাদ শুরু করলে এবং অবস্থা বেগতি দেখে হাসপাতাল কর্তপক্ষ পুলিশকে খবর দেয় এবং রোগীর লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রোগীকে বের করে দেয়। তারা আরও অভিযোগ করেন রোগীর অবস্থার অবনতি হলেও ডাক্তার ডেকে পাওয়া যায়নি। তারা ভুল চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

এ বিষয়ে ডাক্তার রুহুল আমিন তালুকদার জানান, রোগীর পেশার বেশী থাকার কারণে সে মারা গেছে কোন অবহেলা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন। সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ কমিউনিটি হাসপাতালের পরিচালক হারুন রশিদদের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য মনিরুল ইসলাম মনি গত ১৫ রমজান রায়গঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর ড্রাইভারের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়।

(এমএমএইচ/এলপিবি/জুলাই ২৪, ২০১৫)