গাইবান্ধা প্রতিনিধি : রাক্ষুসী ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বিলীন ফুলছড়ির পাগলার চর গ্রাম। হুমকির সম্মুখীন তিনথোপার চর। নদী ভাংগনে বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এই গ্রামের ৩৭০ পরিবার। ঈদের সময় ভিজিএফ কার্ডের ১০ কেজি চাল ছাড়া তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি-বেসরাকি কোন সাহায্য সহযোগিতা এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

ভাঙনকবলিত এলাকায় গেলে সুবিধা না পাওয়ার সূত্র ধরেই নদী ভাঙ্গনের শিকার সহায় সম্বলহীন রাশেদা বেগম (২৫) ক্ষোভে বলেন ভোট নেওনের সময় হ্যাগো (মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি) মিষ্টি কথা হুইন্যা পরানটা ভইড়্যা যায়। ভোট পার হওয়ার পর হ্যারা (তারা) আমাগো চেনে না! তাই চর ভাইঙ্গা আমরা ভাইস্যা গেলেই বা কার কি? আমাগো দুঃখ বোঝার এমন কেউ কি আছে?

দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের পাগলার চর গ্রামটি ব্রহ্মপুত্রের ক্রমান্বয়ে ভাঙনে গত দুই সপ্তাহ আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়। এতে করে ২৫০ পরিবার বসতভিটা হারিয়ে একই ইউনিয়নের বিভিন্ন চরসহ পার্শ্ববর্তি ইউনিয়নে আশ্রয় নেয়। সেইসঙ্গে তিনথোপার চর, সন্যাসীর চর, চর হরিচন্ডি, আনন্দবাড়ি চর, গোপিনাথের চর ও ভাটিয়াপাড়ায় ভাংগন অব্যাহত রয়েছে। তবে তিনথোপার চরটি ব্রহ্মপুত্রের অবিরাম ভাংগনে যে কোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য বাদশা মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান, নদী ভাংগনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ঈদের সময় ভিজিএফ কার্ডের ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। তা ছাড়া গৃহ নির্মানসহ ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি বলে জানান।

ইউনিয়নের বসতিপূর্ণ বিভিন্ন চরে ভাংগন প্রসঙ্গে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, গত দুই সপ্তাহে ৬টি গ্রামে ৩৭০ পরিবার নদী গর্ভে সর্বস্ব হারিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। রোপনকৃত ধানসহ প্রায় ৩০০ একর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়। ভাংগনরত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জরুরী সাহায্য হিসাবে ভিজিএফ কাডের ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ২৩৮ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নামের তালিকা ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।

নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করে বলেন এপযন্ত সরকারি বেসরকারি বা সমাজের বিত্তবান লোকরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকদের কোন প্রকার সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। ঈদ আনন্দের ব্যাপারে অনেকেই বলেন, সেমাই চিনি ও প্রতিদিনের মত শাকসবজি দিয়ে সাদা ভাত খাওয়া ছাড়া আর আমরা আর কি আশা করতে পারি। ঘরবাড়ি টানতেই দেনা দফা করতে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের বা আপনজনদের নতুন জামা কেনার প্রশ্নই উঠেনা।

(আরআই/এএস/জুলাই ২৬, ২০১৫)