বান্দরবান প্রতিনিধি :বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বঙ্গোপসাগরে নিন্মচাপের ফলে সাগর উত্তাল থাকায় সাঙ্গু নদীর পানি খুব ধীর গতিতে নামছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের বাড়ী ঘর এখনো বন্যার পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। এদিকে বান্দরবান চট্টগ্রাম সড়কের উপর থেকে পানি সরে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে

সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ী ঢলে ৭ উপজেলার শতাধিক মৎস্য প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শত শত একর ধানী জমির বীজ তলা নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে কৃষকরা।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, এবারের বন্যায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারীভাবে এখনো ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে ও দলগত ভাবে কিছু কিছু আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল রাতে পরিবার পিছু ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে দুর্গত এলাকায় সরকারী ভাবে কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যা কবলিত মানুষ। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানায়, চলতি বন্যায় ৭ উপজেলায় ৬ হাজার ৪ শত ৮১ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখনো তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে তিনি দাবী করেছেন। তিনি জানান, বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ইতিমধ্যে ১২৫ চাল ও আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

বান্দরবান পৌর সভ মেয়র জাবেদ রেজা জানায়, আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে রান্না করা খিচুড়ী বিতরণ অব্যহত রাখা হয়েছে, পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া গেলে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদেও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুর রশিদ আমীন জানান, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৬০ মেঃটন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭ উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দেয়া হয়েছে। বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও কিচুড়ী। আজ দুপুরে বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়েছে। থানছি উপেজেলার দুর্গম অঞ্চলে বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সামগ্রী হেলিকপ্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে সেখানে ত্রাণ পৌছে দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, দুর্গতদের সহায়তায় নগদ টাকাও বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দু’এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে বন্যা কারণে জেলার বেশীর ভাগ এলাকায় কয়েক হাজার টিউব ওয়েল ও রিং ওয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহীপ্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, একমাসের মাথায় পর পর দু’বার বন্যা দেখা দেওয়ায় কয়েক হাজার রিংওয়েল ও টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব মেরামত ও সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।


(এএফবি/এসসি/জুলাই ২৮, ২০১৫)