স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের রায় দেওয়া হবে আগামী বুধবার। মামলাটির কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে কি-না, ওইদিন এ আদেশ দেবেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

গত ১৭ জুন শুনানি শেষ হওয়ায় যেকোনো দিন দেওয়া হবে বলে জানিয়ে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) করেন একই বেঞ্চ। রবিবার এ বেঞ্চের কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার দিন বুধবার ধার্য করা হয়েছে।

গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান।

খালেদার আইনজীবীদের মতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত বা দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এ মামলায় নেই। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দরপত্র অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে তার বিরুদ্ধে এ মামলাটি চলতে পারে না।

তবে দুদকের আইনজীবীর মতে, এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের উপাদান রয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে অনুমোদনের কথা বলে পার পাওয়া যায় না।

গত ১৯ এপ্রিল গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি পেছাতে খালেদার চারটি সময়ের অাবেদন খারিজ করে প্রথমে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি নেওয়া শুরু করেছিলেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে বিচারপতি জাফর আহমেদের পরিবর্তে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল নিষ্পত্তি করতে বিচারপতি আব্দুর রবকে এ বেঞ্চে দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১৮ জুন নাইকো দুর্নীতি মামলার রুলের রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায়ে বলা হয়, নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে বিচারিক আদালতে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খালেদাকে। তবে তার জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানিও এ বেঞ্চে চলবে। গত ৯ এপ্রিল এ মামলাটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন একই আদালত।

মামলাগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি এর আগেও একবার শেষ হওয়ায় রায়ের দিন গত ৫ এপ্রিল ধার্য ছিল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছিল। অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শুরুর অপেক্ষায় ছিল।

তার আগেই এসব মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনে গত ২ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবীদের এ সংক্রান্ত চারটি আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। ফলে ৫ এপ্রিল পূর্ববর্তী স্ব স্ব হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।

এরপর মামলা তিনটির রুল নিষ্পত্তির জন্য গত ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)। ফলে নতুন করে রুল শুনানির কার্যক্রম শুরু হয়।

খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক। এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়।

২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়া ও সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এর আগে-পরে চার্জশিটভুক্ত আসামি খালেদা জিয়াসহ আসামিদের কয়েকজন ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এর মধ্যে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এসব আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন। পরে বেশ কয়েক দফায় মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাড়ান আদালত।

(ওএস/এএস/আগস্ট ০২, ২০১৫)