বরিশাল প্রতিনিধি : স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ স্মৃতি রয়েছে বরিশালকে ঘিরে। অনেক স্মৃতির কথা হয়তো ভুলে গেছেন অনেকেই। আবার হয়তো বা কারো জানা নেই। বরিশালের স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ এক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে নানা অজানা তথ্য।

সূত্রমতে, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে এসে পায়ে হেঁটে সদর রোডের পাশের সরু গলিতে সঙ্গীদের নিয়ে হাঁটছিলেন। সরু গলিটির নাম অনামীলেন। জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে সোজা উল্টো দিকে তিনি হেঁটে চলেন। গন্তব্য দক্ষিণে, যেখানে বর্তমান কাজী মোতাহার হোসেনের (প্রয়াত ) বাড়ি। সেই বাড়িটি ছিল এক আইনজীবী রাজনৈতিক নেতার। বাড়িটিতে অবস্থান করছিলেন সীমান্ত গান্ধি গাফ্ফার খান। বাড়িতে প্রবেশের খানিক পূর্বে একটি বাড়ির সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। বাড়িটির অবয়ব এখনো কিছুটা রয়েছে। বাড়িটির সাইন বোর্ড দেখে বিস্ময়ে সঙ্গীদের দিকে তাকান বঙ্গবন্ধু। জানতে চান, হক কুটির! মানে হক সাহেবের (শেরে বাংলা) বাড়ি এটি? সঙ্গীরা না সূচক জবাব দিলে বঙ্গবন্ধু চলে যান সীমান্ত গান্ধির উদ্দেশ্যে।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার বরিশালে আসেন। তখনকার সাধারন নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে বরিশালে এসেছিলে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। নগরীর বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধু সে বছরের সফরে পাঁচদিন বরিশালে ছিলেন। স্বাধীনতা পূর্বকালে বঙ্গবন্ধু যতোবার বরিশালে এসেছিলেন, ততোবারই সে থাকতেন নগরীর কালীবাড়ি সড়কের বোন আমেনা খাতুনের অর্থাৎ সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব ছেরনিয়াবাতের বাড়িতে। তিনি আরও জানান, নির্বাচনী প্রচারনায় এসে নদীর দেশ বরিশালের গ্রামগঞ্জে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বর্তমান সেটেলমেন্ট (জোনাল) অফিসের সামনে ছিল লঞ্চ টার্মিনাল। সেখান থেকে হাইস্পীড কোম্পানীর দেয়া নৌ-যান ‘পাঁচগাও’তে বঙ্গবন্ধু ঘুরেছেন গ্রামগঞ্জে। শহরে তিনি ঘুরতেন ধনার্ঢ্য ব্যবসায়ী তৎকালীন পাকিস্তান টোব্যাকো কোম্পানীর স্থানীয় ডিষ্ট্রিবিউটর জালাল আহমেদের লাল রঙের একটি কারে।

দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের বরিশালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একবার এসেছিলেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি বরিশালের একটি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। একইদিন তখনকার জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ বেলস পার্ককে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে বেলস পার্ক ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’। একইদিন সকালে বরিশালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধণ করেন বঙ্গবন্ধু। সেই ভিত্তি ফলকেই শহীদ দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতো এ শহরের বাঙলা প্রিয় মানুষ। বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন মাঠের মাঝে ছিল সেই ভিত্তিপ্রস্থর।

নগরীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, ধান-নদী-খালের অবহেলিত বরিশালের উন্নয়নকে নিয়ে সর্বদা স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতা, সাবেক মন্ত্রী ও কৃষক কুলের নয়নমনি আব্দুর রব ছেরনিয়াবাত। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু বরিশালবাসীর জন্য অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালো রাতে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার বোন জামাতা আব্দুর রব ছেরনিয়াবাত সহ তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘাতকদের নির্মম বুলেট শহীদ হন। এরপর দীর্ঘদিন আটকে ছিলো বরিশালবাসীর ভাগ্য উন্নয়ন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্ঠায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী।

(টিবি/পি/অাগস্ট ০৩, ২০১৫)