কলাপাড়া প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরের হিরন পয়েন্টে মাছ শিকারে ব্যস্ত কক্সবাজরের এফবি রিভারমেট-১ ট্রলারের ২০ জেলে। সাগরে জাল ফেলে একটু অবসর সময় কাটাচ্ছিলো তারা। হঠাৎ আকস্মিক ঝড়ে উল্টে যায় ট্রলারটি। সাগরের স্রোতের টানে ভেসে যায় জেলেরা। এ ঘটনা গত ২৮ জুলাইয়ের।

এ ট্রলার ডুবির আটদিন পর গত মঙ্গলবার দুপুরে কুয়াকাটার জেলেরা উদ্ধার করলো ওই ট্রলারের দুই জেলে সালাউদ্দিন মাঝি (৪৫) ও এনায়েত(৪১)কে। সাগরে ফেলা মাছ ধরা জালে আটকা পড়েন তারা। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কলাপাড়ার মহীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে বুধবার সকালে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু ডুবে যাওয়া ওই ট্রলারের ১৮ জেলের এখনও সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হওয়া জেলে সালাউদ্দিন মাঝির বাড়ি মনপুরা উপজেলার দক্ষিন সাগরিয়া গ্রামে ও এনায়েত হোসেনের বাড়ি হাতিয়ার শূন্যেরচর গ্রামে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া উঠে গেছে। খাদ্য ও পানি শূণ্যতায় তাদের নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া সালাউদ্দিন মাঝি জানান, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) ভোরে চট্রগ্রামের বেঙ্গল কোম্পানীর মো. মোস্তফা মিয়ার ট্রলারে করে ২০ জেলে নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে বের হন। তখন সাগর উত্তাল থাকলেও তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেন। ট্রলারে কোন বয়া বা লাইফ জ্যাকেট ছিলো না। প্রায় কয়েক’শ কিলোমিটার চালানোর সাগরে জাল ফেলে সবাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ ঝড়ে তাদের ট্রলারটি ডুবে গেলে সবাই ভেসে যান।

জেলে এনায়েত বলেন,“মোরা ক্যামনে বাইচ্চা আছি হেইয়া কইতে পারমু না। সাগরে ভাসার পর কয়ডা প্লাষ্টিকের বোতল পাইছি। হেই বোতলের রশি গায়ে প্যাচাইয়া ভাইস্যা আছালাম। ট্রলার ডোবার তিনদিনেও সাগরে কোন ট্রলার দেহি নাই। যেদিকে চাই খালি পানি আর পানি। মোগো অবস্থা এ্যামন হইছে যে সাগরের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে যেহানে যাইতাম,ভাডায় আবার হেই যায়গায়ই মনে হয় লইয়া যাইতো। চাইর/পাঁচদিন পর আর ঞুশ আছিলো না। ওই ভাসার লগে ভাইস্যা ভাইস্যা মোনে হয় এইহানে আছি।তাঁরা জানান, তাদের ট্রলারে ২০ জন ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কেউ বেঁচে আছে কিনা জানেন না। এমনকি তাঁদের নামও মনে করতে পারছেন না।

আলীপুরের মিঠুন ফিস’র ম্যানেজার বারেক তালুকদার কলেন, আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসা জেলেরা ওই দুই জেলেকে ফজলু গাজীর আড়তে নিয়ে আসে। কিন্তু তাঁদের অবস্থা খারাপ দেখে মহীপুর হাসপাতালে পাঠাই। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় আজ(বুধবার)সকালে তাঁদের বরিশাল পাঠানো হয়েছে।

চট্রগামের বেঙ্গল কোম্পানীর ট্রলার মালিক মো. মোস্তফা জানান, আট দিন ধরে তাঁদের খুজছেন। দুই জেলে উদ্ধার হওয়ায় তাঁরা খুশি। কিন্তু এখনও ট্রলারসহ নিখোঁজ রয়েছে ১৮ জেলে। তিনিও জেলেদের নাম জানাতে পারেন নি।

(এমকেআর/পি/অাগস্ট ০৫, ২০১৫)