উত্তরাধিকার ৭১ ডেস্ক: নিউটনের হাত ধরে আমূলে বদলে গিয়েছিল বিজ্ঞানের জগত। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞনের ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হয় তার হাতে। মহাকর্ষ সুত্র, গতিসূত্র, আলোর কণা-তত্ত্ব, বেনিআসহকলা-তত্ত্ব, ক্যালকুলাসসহ অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আবিষ্কারক এই নিউটন। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে লোকটা ছিলেন একেবারে আত্মভোলা টাইপের।

খুব ছোটবেলায় নিউটনের মা তাকে ছেড়ে চলে যান। মায়ের জন্য সবসময় মন কাঁদত নিউটনের। কিন্তু তার সাথে দেখা করার অনুমতি ছিল না। অসহায় নিউটন এ কারণেই হয়তো একাকীত্ব বরণ করে নেন। তার একা থাকার প্রবণাতাই তাকে আরো নিঃসঙ্গ করে তোলে। বন্ধুরা তার সাথে খেলতে চাইত না। তিনিও তাদের আশা ত্যাগ করে ভীরু, শান্ত-শিষ্ট, ঘরকুণো বাবু হয়ে পড়ে থাকতেন। এই ভীরুতা তাকে পিছু ছাড়েনি, যখন তিনি বড় বড় সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করলেন তখনো। সব সময় তার মনে হতো- এই বুঝি তার সব গবেষণা কেউ চুরি করবে বা বন্ধুরা তা বাইরে পাঁচার করে দেবে। এই অমূলক ভয়ের কারণেই মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কারের পরেও প্রায় ত্রিশ বছর তা প্রকাশ করেননি নিউটন। ক্যালকুলাস আবিষ্কারের পরও তা প্রকাশ করেননি। ওদিকে আরেক বিখ্যাত গণিতবিদ লিবনিজ সম্পূর্ণ সতন্ত্রভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করলেন। তখন নিউটন ভাবলেন, লিবনিজ তাঁর আবিষ্কার চুরি করে নিজের নামে চালাচ্ছে। তখন তিনি ক্যালকুলাস আবিষ্কারের ব্যাপারটা কয়েকজন কাছের বন্ধুকে খুলে বললেন। এক কান দু’কান হয়ে সে কথাটা পৌঁছে গেল লিবনিজের কান পর্যন্তও। তখন লিবনিজ উল্টো অভিযোগ করলেন নিউটনের বিপক্ষে, চুরিটা তিনি করেন নি, বরং তারটাই নিউটন করেছেন। অবশেষে হস্তক্ষেপ করতে হলো দু’পক্ষের বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের। নিউটন সম্পূর্ণ নতুন ফর্মুলায় ক্যালকুলাসের মেথড নতুনভাবে প্রমাণ করলেন। প্রমাণ দিলেন লিবনিজও। বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের আর বুঝতে বাকি রইল, কেউ কারো ফর্মুলা চুরি করেনি। একই সময়ে আলাদা আলাদাভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছেন।

নিউটন কোনো বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে যেমন জড়িত ছিলেন না, তেমনি থিয়েটার, নাটক, গান কোনটাই পছন্দ করতেন না। শিল্প-সাহিত্যেরও ধার ধারতেন। কবিতা ছিল তাঁর ভীষণ অপছন্দের বিষয়। কবিতা লেখাকে তিনি লোক-দেখানো সেকেলে কালচার মনে করতেন। তাঁর চোখে কবিতা হলো অতি চালাকের নির্বুদ্ধিতা।

তিরিশ বছর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক ছিলেন, হয়েছিলেন লুকেসিয়ান অধ্যাপকও। দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে মাত্র তিনজন ছাত্রকে পড়িয়েছিলেন। দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো, তাঁরা কেউই স্নাতক হতে পারেন নি।

তিনি রসায়ন নিয়েও গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ক্রমে মানসিক অসুস্থতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। ধারণা করা হয় পারদের বিষক্রিয়া থেকে এই অসুস্থতার সূত্রপাত। ১৬৯২-১৬৯৩ এই দুই বছর বলা যায় নিউটন বদ্ধ উন্মাদই ছিলেন।

একটা মজার ঘটনা দিয়ে নিউটনের খেয়ালিপনার ইতি টানা যাক। হতে পারে, এটা আপেল পতনের মতো গালগল্প।

নিউটন একবার একটা বিড়াল পুষেছিলেন। ইংল্যান্ডে যে ভয়াবহ শীত পড়ে, একথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য শীত নিবারক বদ্ধ ঘরে বসবাস করত ইংল্যান্ডবাসীরা। তো নিউটনেরও ছিল তেমন এক ঘর। কিন্তু সমস্যা হলো বিড়ালটাকে নিয়ে। তার তো বাইরে যাবার দরকার হয়! তাই বিড়ালটা যাতে বাইরে আসা-যাওয়া করতে পারে এজন্য ঘরের দেয়ালে একটা ছোট্ট ছিদ্র করে দিলেন। এর বিড়ালটা একটা বাচ্চা হলো। একসময় সেটাও মায়ের সাথে বাইরে যেতে শুর করল। তখন নিউটনের মনে হলো দুই সাইজের দুটো বিড়ালের জন্য একটা ছিদ্র যথেষ্ট নয়। তো ছোট্ট বিড়াল ছানার জন্য আরেকটা ছিদ্র করলেন। সেটা করার পরই তাঁর মনে হলো, কত বোকামী তিনি করেছেন!

(ওএস/এলপিবি/আগস্ট ৬, ২০১৫)