স্পোর্টস ডেস্ক : ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের প্রথম দিন শেষে সতীর্থদের নিয়ে সাজঘরে ফিরছেন মাইকেল ক্লার্ক। মুখে নেই সেই মিষ্টি হাসিটা। বরং সেখানে শেষ বিকেলের ম্লান আলোর বিষণ্নতা। সারাটা দিন ক্লার্কদের ওপর দিয়ে যা গেছে, মুখে হাসি থাকার কথা নয়। চেহারা বলছে আরও বেশি কিছু, ক্লার্কের চিন্তার রেখা কেবল ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টেই সীমাবদ্ধ নয়, বিস্তৃত ভবিষ্যতের দিকেও।

এমনিতে কয়েক দিন ধরেই নানা সমালোচনা অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে ঘিরে। অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম তো এরই মধ্যে ক্লার্কের শেষও দেখে ফেলছে। একের পর এক ব্যর্থতায় সমালোচকদের পালে লাগছে জোর হাওয়া। এতে যেন ক্লার্কের প্রত্যয়ের দেয়ালটা ধসে পড়ছে ধীরে ধীরে। যদি তা-ই হয়, অবধারিতভাবে প্রশ্নগুলো এসে যাচ্ছে, তবে কি এই অ্যাশেজ দিয়েই যতি পড়ে যাচ্ছে ক্লার্কের ক্যারিয়ারের?

সে রকমই গুঞ্জন চলছিল এই টেস্টের আগে। ব্যাটে দীর্ঘ রান খরার পাশাপাশি দলের বেহাল দশা, অ্যাশেজ হারের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা—খড়গটা নেমে আসতে পারে শিগগিরই। ছেঁটে ফেলার ব্যাপারে অস্ট্রেলীয় নির্বাচকেরা যে নির্মোহ। কিংবা ক্লার্কের সামনে তাঁরা বেঁধে দিতে পারেন সম্মানজনক প্রস্থানের পথ। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে রিকি পন্টিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। আরেকটি বাংলাদেশ সফরের আগমুহূর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেই অধ্যায়!

এবার অ্যাশেজে অধিনায়ক ক্লার্ক এবং ব্যাটসম্যান ক্লার্ক যেন এক বিন্দুতে মিলে যাচ্ছেন। সেই বিন্দুর নাম ব্যর্থতা। ব্যাটে রান নেই, দলও ডুবছে একের পর এক হতাশায়। সিরিজে ৭ ইনিংসে ১৭.৩৩ গড়ে রান ১০৪। এমনকি সিরিজে ক্লার্কের চেয়ে বেশি রান করেছেন মিচেল জনসন!

একজন ব্যাটসম্যানের খারাপ সময় যেতেই পারে। তবে ক্লার্কের সাম্প্রতিক সময়ে আউটের ধরন, শরীরভাষা হতাশই করছে তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের। গতকাল যখন টসে হারল অস্ট্রেলিয়া, ক্লার্ককে বেশ উদ্বেগাকুল দেখা গেল। যেন ম্যাচের আগেই ম্যাচ শেষ! ক্লার্কের ক্ষেত্রে এমন আগে কখনো দেখা গেছে কিনা সন্দেহ! প্রথম ইনিংসে তাঁর আউটের ধরনটাও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য। ৬ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে অস্ট্রেলিয়া। প্রায় ধসে পড়েছে টপ অর্ডার।

এমন ধ্বংসস্তূপ থেকে কতবারই তো দলকে রক্ষা করেছেন ক্লার্ক। সেই তিনিই করলেন কি স্টুয়ার্ট ব্রডের অফস্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে চালালেন। পা দুটো যেন বরফজমাট হয়ে গেছে। একদমই পায়ের কাজ ছিল না। বলটা অনায়াসে লুফে নিলেন স্লিপে দাঁড়ানো ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। দল পড়ে গেল আরও বিপদে। সে বিপদ থেকে রক্ষা পায়নি অস্ট্রেলিয়া।

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আশার কথাই শোনাচ্ছেন ক্লার্ক। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও অ্যাশেজ বাঁচানোর স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের, কিছুই ঠিকঠাক হয়নি। এখনো আমরা অ্যাশেজ বাঁচানোর পথ খুঁজে পেতে পারি... এ টেস্টে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। এ ব্যর্থতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।’

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একটাই উপায়, সামনে এগোনো। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের সামনে এ পথটিই খোলা। এক যুগের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে ঋদ্ধ ক্লার্ক যদি এ বৈতরণী না পেরোতে পারেন, হয়তো বাংলাদেশ সফরের আগেই ইতি টানতে হতে পারে খেলোয়াড়ি জীবনের। চারদিকের গুঞ্জন অন্তত তা-ই বলছে।

(ওএস/এএস/আগস্ট ০৭, ২০১৫)