স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই একপাহাড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন বলেই জানালেন আ. জ. ম. নাছির। জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস, দখল, উচ্ছেদ, বিলবোর্ড রাজনীতি, দলীয় প্রভাব, মাদক, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মূলধন সংকট, পরিকল্পনাহীনতা আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের নানা হুমকির কথা বললেন বন্দর নগরীর এই অভিভাবক।

আর এইসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি এবার চাইলেন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা। সঙ্গে সঙ্গে এবার তিনি দাবি তুললেন নগর সরকার গঠনেরও। এটা পেলে সকল রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গঠনের অঙ্গীকার করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের এই মেয়র তার দাবিগুলো জানান ঢাকার একটি কর্মসূচিতে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে চিটাগাং জার্নালিস্ট ফোরাম ঢাকা (সিজেএফডি) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা তুলে ধরছিলেন তিনি।

মেয়র নাছির বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ আছে। তবে আমি সবাইকে বলেছি, আমার কাছে মেয়র হিসেবে কোন দল, ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ নাই।সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আমি নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। এ ক্ষেত্রে নগর সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কারণ মেয়রদের নগরের ওপর কোন কর্তৃত্ব নেই। শহরের অনেক রাস্তা বা স্থাপনাই অন্য প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু দায় নিতে হয় সিটি কর্পোরেশনকেই।

মেয়র জানান, ১৯৯৫ সালে করা চট্টগ্রামের মাস্টার প্ল্যানে সিটি কর্পোরেশনের কাউকে রাখা না হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন তা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এবার একটি পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

নাছির বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। কর্নফুলীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এটা হলে দুপাড়ে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন হবে।

চট্রগাম এক সময় দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও সুনাম অর্জন করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু মানুষের খামখেয়ালীপনা, আত্মকেন্দ্রিকতা আর লোভের কারণে চট্টগ্রাম আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত, সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম আজ জলাবদ্ধতা আর দুর্গন্ধের নগরীও। এ নগরকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কেবল সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে এটাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

আ জ ম নাছির বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এখন কয়েকশ কোটি টাকার দেনা। সাতটি বিভাগই চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য লোকবল নেই। যা লোকবল রয়েছে তার অর্ধেকই অস্থায়ী। হটাৎ করেই এইসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আর উন্নয়নের জন্য কর্পোরেশনের টাকাও নেই। নগরের একটি রাস্তার অবস্থাও ভালো নেই। খালগুলো খননের প্রয়োজন। বেড়ি বাঁধের মাধ্যমে নগর বাচাতে হবে জোয়ারের পানি থেকে। খালে দিতে হবে স্লুইস গেট।

নাছির বলেন, খালের মধ্যে প্রভাবশালীদের অনেক বহুতল ভবন রয়েছে। অনেকেই পাহাড় বা সিটি কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকার জমি দখল করে আছে। কেউবা কাঁচা টাকার বিলবোর্ডের ব্যবসা করছেন। কেউ আছেন মাদক সম্রাট, মানব পাচারকারী। আমি সবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এরা সবাই আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষতি করতে পারে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি যে কোন ঝুঁকি নিতে রাজি। এতে আমার জীবন গেলেও ভয় পাইনা।

মেয়র নাছির জানান, এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ নানা উন্নয়ন সহযোগী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। দরকার কেবল মেয়রের স্বাধীনতা আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষ জনবল।

রাস্তার দীর্ঘ স্থায়িত্ব বাড়াতে মেয়র বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের রাস্তা তৈরির ওপর জোর দিয়ে বলেন, বিটুমিনের রাস্তা নিন্মমানের হলে ও কংক্রিটের রাস্তা দীর্ঘম্থায়ী হয়। জোয়ারের পানিতে বিটুমিন নষ্ট হলেও সিমেন্টের রাস্তা ১০ থেকে ১৫ বছর টিকে থাকে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিজেএফডি সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক শামীম জাহাঙ্গীর, শাহীনুল ইসলাম চৌধুরী, মুস্তফা কামাল, অনুপ খাস্তগীর প্রমুখ।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১১, ২০১৫)