নওগাঁ প্রতিনিধি : বাবা-মা মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরির কারিগর। অভাব অনটনের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এমন দম্পতির একমাত্র সন্তান শিল্পী রানী পাল। অভাবকে জয় করে সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। শিল্পী নওগাঁর মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষাতেও সে ভাল ফলাফল করেছে। কিন্তু ভাল ফলাফল করেও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে শিল্পী রানী পাল।

ইতোমধ্যে তার বাবা-মা লেখাপড়ার খরচ যোগাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। মেয়েকে বিয়ে দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। শিল্পীর ইচ্ছে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সমাজের সেবা করা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাব। শিল্পী নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের খুদিয়াডাঙ্গা (পালপাড়া) গ্রামের নিরেন্দ্রনাথ পালের একমাত্র কন্যা।

শিল্পীর মা জয়ন্তী রানী পাল এ প্রতিবেদককে জানান, মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করে এক সময় ভালো উপার্জন হতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই অবস্থা এখন আর নেই। বর্তমানে সিলভার, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের তৈরি জিনিসপত্রের কদর অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা তেমন নেই বল্লেই চলে। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া এসব সামগ্রী এখন আর কেউ কিনতে চান না।

তিনি আরো জানান, আগে নদী থেকে মাটি বিনা খরচায় পাওয়া যেত। এখন টাকা দিয়ে মাটি কিনতে হয়। সেই সঙ্গে শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে কয়েকগুন। একদিকে চাহিদা কম, অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ পেশার আয় দিয়ে বর্তমানে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। তাই ইচ্ছে থাকলেও এ অবস্থায় মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মেধাবী শিক্ষার্থী শিল্পী রানী পাল জানায়, অভাব-অনটনের মধ্যেও এতদুর এগিয়েছি। শিক্ষা জীবনে কোনোদিন গৃহ শিক্ষক পাইনি। বাবা-মার পেশায় প্রতিদিন সহযোগিতা করতে হয়েছে। এরপর রাত জেগে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য। শিল্পীর শঙ্কা, শিক্ষা জীবনের এখানেই তার সমাপ্তি ঘটতে পারে। শিল্পী আরো জানায়, ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সমাজের সেবা করার ইচ্ছে রয়েছে তার। শিক্ষক হবার প্রবল বাসনা নিয়ে নিজের চেষ্টায় সে এতদুর এগিয়েছে। কিন্তু বাবা-মার অসহায়ত্বের কাছে হেরে যেতে বসেছে তার উচ্চ শিক্ষার বাসনা।

(বিএম/এএস/আগস্ট ১৩, ২০১৫)