স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছর ইউএসএআইডি শান্তির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অধীনে পাঁচ বছর মেয়াদী ১৮ কোটি ডলারের নতুন প্রকল্প শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিফেন্স ব্লুম মার্শা বার্নিকাট। গত ৪৫ বছরে নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি করেছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু’তে আয়োজিত ‘ইউএসএআইডি বাংলাদেশে শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচি ২০১০-২০১৫ : সফলতা ও চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

চলতি বছর এ কর্মসূচির আওতায় তিনটি প্রকল্প শেষ হয়েছে জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, গত পাঁচ বছরের সাফল্যের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ‘শান্তির জন্য খাদ্য’ কর্মসূচির নতুন পর্যায়ে তিনটি চলমান লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হবে। এ লক্ষ্যগুলো হলো- স্থানীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, ভোগ ও বাজার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ানো; খাদ্যাভ্যাসের উন্নয়ন ও পরিবারে সন্তানদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহে সহায়তার মাধ্যমে অপুষ্টির হার কমানো; দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও সাফল্যের সঙ্গে গ্রহণ করতে সরকারি সংস্থা ও কমিউনিটিগুলোকে সাহায্য করার মাধ্যমে দুর্যোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভর। চরম দারিদ্র্য গত কয়েক বছরে অনেকটাই কমে এসেছে। ফলস্বরূপ মানুষ আরও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাচ্ছে। তাই তারা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ এবং উৎপাদনশীল।

তবে এ সাফল্যের পাশাপাশি কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিছু আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির দ্বারা অরক্ষিত। বিশ্ব খাদ্য মূল্যের ওঠা-নামা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, মৌসুমী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এসব কিছু অর্জিত অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিতদের উন্নয়নের জন্য এখনো অনেক কিছু করতে হবে বাংলাদেশকে।

প্রায় তিন কোটি বাংলাদেশি এখনো হতদরিদ্র এবং ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভুগছে উল্লেখ করে বার্নিকাট বলেন, বিশেষজ্ঞরা হিসেব করে দেখেছেন, কমপক্ষে ছয় কোটি বাংলাদেশি প্রতি বছর ছয় থেকে সাত মাস তিনবেলা খাবার পায় না। এ পরিবারগুলো সুষম খাদ্যও পায় না। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যপারটি আরও ভয়াবহ। ২০১৪ সালের জনতাত্ত্বিক এবং স্বাস্থ্য জরিপের উপাত্ত খুবই পীড়াদায়ক। পাঁচ বছরের নিচের ৩৬ শতাংশ শিশু তাদের বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত লম্বা নয় অথবা খর্বাকৃতি। খর্বাকৃতির দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী ও তীব্র অপুষ্টির বিষয়টি প্রকাশ পায়। খর্বাকৃতির উচ্চতা শিশুদের স্বাস্থ্যে ও বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রভাব ফেলে। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য সহযোগিতায় কাজ করছে।

এ বছর শেষ হওয়া খাদ্য সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো থেকে আমরা ভবিষ্যতে যে সুযোগ আছে তা বিশ্লেষণ করব। গত পাঁচ বছরে ইউএসএআইডি’র শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচি নামে এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের দরিদ্র এবং অরক্ষিত ৩৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অপুষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একদিনে বা একবছরে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এটা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ও পরিবার গঠনের মতো চলমান প্রচেষ্টা। এ সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান, দাতা কমিউনিটি, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। যাতে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী, দুর্যোগ প্রতিরোধে আরও বেশি সক্ষম ও সম্পদ ব্যবহারে দক্ষ হতে পারে।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৩, ২০১৫)