স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেওয়ার বর্তমান প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি নারী উদ্যোক্তারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‍আতিউর রহমান সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দিয়েছেন দিকনির্দেশনা।

নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট সম্মেলন ২০১৫-তে অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানের কয়েকশ নারী উদ্যোক্তা অংশ নেন।

সম্মেলনের শুরুতেই উন্মুক্ত আলোচনায় নারী উদ্যোক্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এসএমই বিভাগের কর্মকর্তারা ঋণ পাওয়া ও বিতরণে নিজেদের অভিজ্ঞাতা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান তাদের অভিজ্ঞতা শুনে তা সমাধানে নির্দেশনা দেন।

এসময় ব্যাংক ঋণ পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ফ্যাশন হাউজ তারা মার্কার স্বত্বাধিকারী তাপসী সাহা বলেন, ঋণ নিতে ব্যাংকে যাওয়ার পরে আমাকে ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, টিন নম্বরসহ বহু কাগজের একটি তালিকা ধরিয়ে দিলেন কর্মকর্তা। এসব কাগজ প্রস্তুত করতে এক বছরের বেশি সময় ব্যয় হয়।

সময় বাঁচাতে প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তাকে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রথমবার ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তাপসী সাহা। তবে পরবর্তীতে সব কাগজ জমা দেওয়ার শর্তে। এভাবে ঋণ না দিলে কোনো উদ্যোক্তাই ব্যবসা শুরু করে ঋণ পাবে না।

নারী উদ্যোক্তা ফারজানা বলেন, ঋণের আবেদন করার আগেই ব্যাংকগুলো একগাদা কাগজের তালিকা ধরিয়ে দেন। ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ না করলে আমরা ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারব না।

তাপসী ও ফারজানা ছাড়া আরও কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা ঋণ পাওয়ার বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। দাবি জানান ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে বলেন, নারী উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী নারীদের সমস্যা সমাধান, উৎসাহ প্রদান, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্যাদি অবহিত করা, হয়রানিমুক্তভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী উদ্যোক্তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে উদাসীন।

বিদম্যান ঋণ প্রকল্পও নারী উদ্যোক্তাদের উপযোগী নয়। সমস্যা সমাধানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ প্রকল্প পুনঃডিজাইন করতে হবে।

আতিউর রহমান বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের প্রসার ঘটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে একটি প্রশিক্ষণ ইনকিউবেটর সেন্টার স্থাপন করা হবে।

বিবিটিএর সঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট যৌথভাবে নারীদের বিভিন্ন কাজের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেবে। দেখাবে সহজে ট্রেড লাইসেন্স, টিন ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট পাওয়ার কৌশলও। আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে এ কার্যক্রম।

গর্ভনর বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সিটি করপোরেশনে উইমেন মার্কেট করে তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রি ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা গেলে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে আস্তে আস্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নারী বিভাগগুলো নারী কর্মকর্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি গর্ভনর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় পরিবার ও সমাজে অনেক নির্যাতিত রয়েছেন। তাই নারীর ক্ষমতায়নে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়েছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগাম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির সভাপতি আসাদ খান, ইন্সপায়ার্ড প্রজেক্ট কম্পোনেন্ট-১ এর টিম লিডার আলী সাবেত ও বিবিটিএ মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৩, ২০১৫)