নাটোর প্রতিনিধি: দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেও অভাব অনটনের কারণে শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হচ্ছে নাটোর সদর উপজেলার আগদিঘা গ্রামের দিনমজুর সোলেমান দরজির মেধাবী মেয়ে সালমা খাতুনকে।

অথচ সালমার স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সালমার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে শংকা দেখা দিয়েছে। অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমের কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় একডালা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ থেকে সে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

তিন ভাই বোনের মধ্যে দু'ভাই বোন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ভাই মোহম্মদ শাহিন নাটোর সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ দশমিক ৩৮ পেয়ে পাশ করেছে। অভাব-অনটনের সংসারে দিনমজুর বাবার পক্ষে দু'ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব নয়। তাই সালমা তার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শংকায় রয়েছে।

সালমা জানায়, আর্থিক সংকটের কারণে কোন কোচিং বা গৃহ শিক্ষকর কাছে পড়ার সুযোগ হয়নি তাদের। উপরন্তু দু'ভাই বোনকে প্রাইভেট পড়িয়ে ও গ্রামের একটি কোচিং সেন্টারে চাকরী করে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়েছে। বাড়িতে কেরোসিনের আলোয় লেখাপড়া করতে হয়েছে। পরীক্ষার সময় সকালে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি। দু'কিলোমিটার পথ হেঁটে গিয়ে অটোরিক্সায় চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। এজন্য পরীক্ষা শুরুর অনেকে আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ মাসিক বেতন নেয়নি। শুধু পরীক্ষার ফি নিয়েছে। স্কুলেও একইভাবে লেখা পড়া করতে হয়েছে।

শাহিন জানায়, অভাবি সংসারে যেখানে দু'বেলা খাবার জোটাতে তার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে দু'জনের শিক্ষা খরচ যোগান হবে কিভাবে। যেকোন একজনকে উচচ শিক্ষা গ্রহণ থেকে সরে যেতে হবে। প্রত্যাশা যুব সংঘ নামে গ্রামের ক্লাবের কোচিং সেন্টারে দু'ভাইবোন মাষ্টারের চাকরী ও প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগানো হয়েছে। ক্লাব থেকেও সহায়তা করা হয়েছে।

সোলেমান আলী জানান, শিক্ষকদের কাছে শুনেছেন তার মেয়ে মেধাবী। খেয়ে না খেয়ে একজনের পড়ার খরচ যোগানো সম্ভব হতে পারে। দু'জনের পড়ার খরচ যোগাবো কোথায় থেকে। সালামাকে বিয়ে দিলেই পরের বাড়িতে যাবে।

কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক সুকমল ফৌজদার জানান, হৃদয়বান ব্যাক্তিদের সহায়তা না পেলে মেধাবী সালমা ও তার ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক সাজেদুর রহমান সেলিম জানান, প্রতিবেশী সহপাঠি, স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের সহায়তায় সালমা এইচএসসির গন্ডি পেরোতে পেরেছে। অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমী সালমা সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফলাফল করবে।

(এমআর/এলপিবি/আগস্ট ১৬, ২০১৫)