শরীয়তপুর প্রতিনিধি :পুলিশ পরিচয়ে শরীয়তপুরে ন্যাশনাল ব্যাংক এর দুই কর্মকর্তাকে ২০ লক্ষ টাকাসহ অপহরন করেছে কতিপয় সন্ত্রাসী। অপহৃত দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরনের প্রায় তিন ঘন্টা পরে ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কিেিলামিটার দুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচর এলাকার আড়িয়াল খাঁ ব্রীজের নিচ থেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় রবিবার রাত ১১ টায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও গত ২দিনেও টাকা লুট ও অপহরনের জট খুলেনি। পুলিশ কুল কিনারা করতে পারেনি দুর্ধর্ষ এই ছিনতাইয়ের।

জাজিরা থানা ও ন্যাশনাল ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুর ১টার দিকে ন্যাশনাল ব্যাংক এর জাজিরা উপেেজলার কাজিরহাট শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকের নড়িয়া শাখার জুনিয়র ক্যাশ অফিসার চান শরীফ খান ও অফিস সহায়ক উজ্জল মুন্সি একটি মোটর সাইকেল যোগে রওনা দেন। জাজিরার বিলাসপুরের ভাংগা ব্রীজের নিকট পৌছলে একটি সাদা প্রাইভেটকারে থাকা ৫ যুবক মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে। মোটর সাইকেলে থাকা চান শরীফ খান ও উজ্জল মুন্সিকে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশের পরিচয় দিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে চোখ বেধে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে বেদম মাধর করে। তাদের সাথে থাকা ২০ লাখ টাকা, ২টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে দীর্ঘ সময় তারা নড়িয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের শাখায় না পৌছানোয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে অবহিত করে।

অপহরণকারীরা প্রায় ৩ ঘন্টার পরে বিকেল ৪ টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পাঁচচর আড়িয়াল খা ব্রিজের কাছে অপহৃত দুইজনকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্রিজের ঢালে ফেলে দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাজির হাট শাখার ম্যানেজার আবদুর কাদেরকে খবর দেয়। পরে তাদের উদ্ধার করে রবিবার সন্ধ্যায় জাজিরা থানায় নিয়ে আসে। নড়িয়া শাখার জুনিয়র ক্যাশ অফিসার চান শরীফ খান ও অফিস সহায়ক উজ্জল মুন্সিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার রাত ১১টায় ন্যাশনাল ব্যাংকের নড়িয়া শাখার ম্যানেজার এসকান্দার আলী বাদী হয়ে জাজিরা থানায় অজ্ঞাত ৪-৫ ব্যাক্তিতে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার ন্যাশনাল ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এলাকায় পরিদর্শনে এসেছেন।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ব্যাংকের নড়িয়া শাখার জুনিয়র ক্যাশ অফিসার চান শরীফ খান বলেন, আমরা ন্যাশনাল ব্যাংকের কাজীর হাট শাখা থেকে রোববার দুপুরে ২০ লাখ টাকা নিয়ে নড়িয়া শাখায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে জাজিরার বিলাশপুর এলাকার ভাংগা ব্রীজের নিকট পৌছলে সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেট কারে ৫ জন ছিনতাই কারী আমাদের গতি রোধ করে ঘিরে ফেলে এবং আমাদের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে চোখ বেধে ব্যাপক মার ধর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এসময় তারা নগদ ২০ লাখ টাকা ও ২টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। প্রায় তিন ঘন্টা পরে আমাদের কে শিবচর এলাকার আড়িয়াল খাঁ ব্রীজের নিচে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে। আমরা তাদের মাধ্যমে জাজিরা থানায় চলে আসি।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাজীর হাট শাখার ফাষ্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন ,আমাদের ব্রাঞ্চ থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নড়িয়া শাখার জুনিয়র ক্যাশ অফিসার চান শরীফ খান ও অফিস সহায়ক উজ্জল মুন্সি মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘ সময় তারা নড়িয়া ব্রাঞ্চে না পৌছানোর কারনে আমরা উৎকন্ঠায় পরি। পরে আমরা ওই ২ অফিসারের মুঠো ফোনে কল করলে ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টা পরে শিবচর এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন আমাদের ম্যানেজারকে ফোন করে জানান, ব্যাংকের দুইজন লোক ব্রীজের নীচে পড়ে আছে । স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

কাজীরহাট শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের বলেন, নড়িয়া মাখার ব্যবস্থাপক আমার কাছে ২০ লক্ষ টাকার চাহিদা দিয়ে লোক পাঠালে আমি ১ হাজার টাকা নোটের ১০ লক্ষ টাকা এবং ৫ শত টাকা নোটের ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে মোট ২০ লক্ষ টাকা পাঠাই। নড়িয়া শাখার জুনিয়র ক্যাশ অফিসার চান শরীফ খান ও অফিস সহায়ক উজ্জল মুন্সি কোন রকম নিরাপত্তা কর্মী বা গানম্যানের সহায়তা ছারাই মোটর সাইকেল যোগে রওনা করেন। পথিমধ্যে এই অপহরনের ঘটনা ঘটে।

শরীয়তপুর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, আমরা ব্যাংকের টাকা ছিরতাইয়ের বিষয়ে টাকা বহনকারী দুই স্টাফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এখনো তাদের কোন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরূল ইসলাম বলেন, রবিবার গভীর রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ঘটনার মূল হোতাদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।


(কেএনআই/এসসি/আগষ্ট ১৭,২০১৫)