সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সহপাঠি অন্যসব বন্ধুদের মতো লেখাপড়ার জন্য সময় ব্যয় করতে পারেনি তাসলিমা খাতুন। তাকে নিরন্তন লড়াই করতে হয়েছে অভাব আর দারিদ্রতার সাথে। রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিরামহীন কষ্টের মাঝে লেখাপড়া যেন তার একটা অংশ মাত্র।

অজপাড়া গাঁয়ের এই অদম্য মেধাবী ছাত্রী সব বাধা পেরিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সবার মতো ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথেই তাসলিমা জানতে পারেনি তার পরীক্ষা পাশের খবর। কারণ ফল প্রকাশের সময় মাঠে অন্যের জমিতে সে ধান কুড়াচ্ছিল। ধান কুড়ানি হত দরিদ্র মেয়েটার পরীক্ষা পাশের খবর তার মা দিন মজুর শহিদা বেগম বিকালে তাকে জানায়।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খোরদো গ্রামে তাসলিমাদের বাড়ি। দু’ভাই- বোনের মধ্যে সে বড়। ছোট ভাই মারুফ হোসেন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বাবা নজিম সরদার হাট বাজার ও গ্রাম গঞ্জে লালন সঙ্গীত গেয়ে যা পায় তাতে তার নিজের পেটটিই চলেনা। মা শাহিদা বেগম অন্যের ক্ষেতে কামলার কাজ করে মজুরী হিসেবে যা পায় তাদিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলে অনাটনের সংসার। জমি বলেতে কিছুই নেই। ভূমিহীন তাসলিমার পরিবার থাকে গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক কাদের সরদারের বাড়ির পেছনে খুপড়ি ঘরের মধ্যে।
তাসলিমার বাবা মেয়ের ভালো ফলাফলের খবরে দারুন খুশি। পড়াশুনার খরচের কথা ভেবে তিনি বলেন মেয়ে সন্তান খরচ করে বেশী পড়িয়ে লাভ কি? কয়দিন পরেই তো পরের ঘরে দিতে হবে। তিনি ছন্দ কেটে বলেন, ‘মেয়ে সন্তান হইলে পরের, আর মরলে গোরের,!
শহিদা বেগম জানান, অভাবের সংসার। মেয়েটা আমার প্রায় প্রতিদিনই না খেয়ে স্কুলে গেছে। প্রাইভেট পড়াতে পারিনি। পরের চালের নিচে চাল দিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি। দিনের আলো আর আশ্রয়দাতার বাড়ির পিছনে লাগানো নিরপত্তা বাতির আলোতেই মেয়েটার লেখা পড়া করতে হয়েছে। তিনি তাসলিমার আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে অস্থির। তিনি জানান, ওদের বাবা ভবঘুরে। তার উপর মেয়েটা ভালো ফলাফল করে তাকে বিপদে ফেলেছে।
তাসলিমা খাতুন জানায়, সে স্থানীয় খোরদো সালেহা হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে বানিজ্য বিভাগ থেকে সে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে তার মায়ের সাথে অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজও করে আসছে। এখন এলাকায় পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। মায়ের সাথে সে অন্যের জমিতে মজুরি ভিত্তিতে ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজও করছে। কাজ না থাকলে সে মাঠে ধান কুড়িয়ে সংসারের জন্য যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করে। তাসলিমা খাতুন ভালো ফলাফলের জন্য নিজিকে ভাগ্যবান উল্লেখ করে জানায়, পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি কলেজে সে এইচএসসি ভর্তি হবে। দুরের ভালো কোন কলেজে পড়া তার জন্য দু:স্বপ্ন মাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে সে একজন ব্যাংকার হতে চায়।
ছালেহা হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম শহিদুল ইসলাম জানান, তাসলিমা খাতুন দরিদ্র হলেও ফলাফল দেখে মনে হয় জন্মগত ভাবেই সে মেধাবী। বিত্তবানদের একটু সহায়তা পেলে অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারবে হতদরিদ্র তাসলিমা।

(আরকে/এএস/মে ২২, ২০১৪)