দীপংকর গৌতম: প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি সম্পর্কে মিথ্যা, অসত্য লিখে সেটি তার ফেসবুক থেকে পোস্ট করে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।

লেখাটি জনসম্মুখে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি দিয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। এর ফলে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে, যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।

প্রবীর সিকদার লেখাটি পোস্ট করার মাধ্যমে জনপ্রিয় রাজনীতিক ব্যক্তি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার সুগভীর চক্রান্ত করেছেন। এত সজাগ ও দেশদরদী লোকজন ফরিদপুরে রয়েছেন যে একজন শহীদ পরিবারের সদস্য একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক জিডি করলে জিডি নেয়া হয়না।

সে বিষয়টি সম্মানে লাগেনা মামলার বাদীর সম্মানে লেগেছে একটি ফেসবুক পোস্ট এবং সে প্রসঙ্গে এই অতিসচেতন আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল মিডিয়াকে বলেছেন, 'মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি সম্পর্কে লেখাটি পড়ে তিনি সংক্ষুব্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে লেখাটি তার সহকর্মী সাক্ষী অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, অ্যাডভোকেট নারায়ন চন্দ্র দাস, অ্যাডভোকেট অসিত কুমার মজুমদার, অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায়, অ্যাডভোকেট জাহিদ ব্যাপারী, অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন জয়, অ্যাডভোকেট প্রদীপ দাস লক্ষণসহ অন্যদেরকে দেখান। তারাও এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর সাক্ষীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি মামলার আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন।'

সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো প্রবীর সিকদার শারিরীক ভাবে অসুস্থ। তবু তাকে হাতকড়া পড়ানো হয়েছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে যিনি দেশ, মানুষ, মাটি আকড়ে রয়েছেন তাকে কেন হাতকড়া পড়ানো হলো? আইনি বিধানে এটা আছে? বাচ্চু রাজাকার নাকের ডগা দিয়ে পালিয়ে গেলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ধরতে পারেনা। ধরে প্রবীর সিকদারের মত সাহসী দেশপ্রেমিকদের। শুধু তাই না তার বিরুদ্ধে যাতে কেউ লড়তে না পারে সে কাজটি করে আমাদের এক মন্ত্রী বাহাদুর বিবিসির সাক্ষাৎকারে এমন ভাব নিয়েছেন যাতে মনে হয় তিনি ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেননা। আমার তখন আইপিটিআইর গানটি মনে হয়েছে- চিনি তোমায় চিনিগো জানি তোমায় জানিগো/সাদা হাতির কালো মাহুৎ তুমি না...।

মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢাকার ফার্মগেইট থেকে প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই রাতেই তাকে ফরিদপুরে নিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবারে একই আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তার আগেই প্রবীর সিকদারে উপর পুলিশ মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। একথা কোর্টে তিনি বললেও বিচারক তাঁর কথা শোনেননি। কেন শুনবেন না দেশটা কি ‘মগের মুল্লুক’ হয়েছে? প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতারে পর থেকে আমরা দেশের কর্তাব্যক্তি ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সার্কাস সার্কাস খেলা লক্ষ করেছি। যেটা মোটেও কাঙ্খিত নয়।

ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে প্রথম দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও মঙ্গলবার রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু।

প্রবীর সিকদার আগে কাজ করেছেন সমকাল ও কালের কণ্ঠের মফস্বল বিভাগে। দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন কালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকে তিনি পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়েছিল বলে প্রবীরের অভিযোগ। এই সাংবাদিককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান। দুঃখ প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রতিবাদ জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।

সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ (আসক) বিভিন্ন সংগঠন প্রবীর সিকদারের মুক্তির দাবি জানায়। ঢাকাসহ সারাদেশের সাংবাদিক ও সচেতন মানুষ প্রতিবাদ করে ওঠে। আদালত জামিন দেওয়ার পর প্রবীর সিকদারকে নেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা কারাগারে। বেলা পৌনে ২টার দিকে জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এই সাংবাদিক।

কিন্ত পরবর্তী তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর। আমরা আশা করছি এরপর আবার সুযোগ বঝে প্রবীর সিকদারের উপর সওয়ার হওয়ার চেষ্টা করে কেউ নাকে শরষের তেল দিয়ে ঘুমালে সে তেল ধুয়ে ফেলুন। কেউটের লেজ দিয়ে কেউ কান চুলকানোর চেষ্টা করবেন না।

(এলপিবি/আগস্ট ১৯, ২০১৫)