নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাটের আদিবাসী কিষাণী রোজিনা কিস্কু আগাম শিম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।

ফলন ও দাম ভালো পেয়ে তার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। একই সঙ্গে হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে সংসারে ফিরিয়ে এনেছে স্বচ্ছলতা। বর্তমানে তার এ সাফল্য দেখে গ্রামের অন্যান্য কিষাণীরাও হাঁস-মুরগী প্রতিপালনসহ আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছে।

জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর মৌজার বাঁশবাড়ী গ্রামের আদিবাসী কৃষক জোনাস টুডু ও তার স্ত্রী রোজিনা কিস্কু অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালাতো। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। বসতবাড়ি ছাড়া তাদের নিজস্ব কোন ফসলি জমি নেই। কিন্তু তাদের দু'জনের স্বপ্ন ছিল বাড়িতে হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করার। লোকমুখে শুনে বছর খানেক আগে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ধামইরহাট এডিপির কর্মকর্তা এলিয়াস মুর্মুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। তার পরামর্শে ওই আদিবাসী কৃষক দম্পতি ওয়ার্ল্ড ভিশন সেন্টারে গিয়ে আগাম সবজি চাষ ও হাঁস মুরগি পালনের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে চাঁদপুর গ্রামের খোরশেদ মেম্বারের ৭ শতক জমি বর্গা নিয়ে তাতে আগাম শিম, পটল, কাঁচা মরিচ ও পেঁপে চাষ শুরু করেন। সবজি চাষের পাশাপাশি বাড়িতে বিদেশী খাকি ক্যাম্বেল জাতের ১শ’ হাঁস ও ১শ’ মুরগি পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার ক্ষেত থেকে প্রতিদিন ২/১ কেজি করে সীম, সপ্তাহে ৩/৪ কেজি কাঁচা মরিচ, ৪/৫ কেজি পটল ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেঁপে উৎপাদন হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে এসব সবজির চাহিদা যেমন বেশি, দামও তেমনি ভালো। তার বাড়ি থেকে প্রতি কেজি শিম ১শ’ টাকা, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এসব সবজি বিক্রি করে তাদের সংসারে এখন আর কোন অভাব অনটন নেই। আগামীর জন্য তারা কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছেন। তাদের ছেলে মেয়েও স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে।

এ ব্যাপারে জোনাস টুডু ও রোজিনা কিস্কু বলেন, “সবজি বিক্রি করে আমাদের সংসার খুব ভালো ভাবে চলছে। তাছাড়া কিছু দিনের মধ্যে মুরগি বিক্রি শুরু হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাঁসগুলো থেকে ডিম পাওয়া যাবে”। তারা আশা করছেন, হাঁসের ডিম ও মুরগি বিক্রির সমুদয় অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন তারা।

আক্ষেপ করে এ জুটি বলেন, সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা অনেকে পেলেও তাদের ভাগ্যে এসব কোন দিন জোটেনি। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে তারা এ প্রকল্পের পরিধি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করবেন। বর্তমানে তাদের এ সাফল্য দেখে গ্রামের অন্যরা এ প্রকল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন ধামইরহাট এডিপি প্রকল্পের ওই কর্ম এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এলিয়াস মুর্মু বলেন, তাদের পক্ষ থেকে ওই আদিবাসী কৃষক দম্পতিকে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে তাদেরকে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করা হবে।

ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, যারা এ ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে। ওই আদিবাসী দম্পতি এখন থেকে কৃষি বিভাগের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। যাতে অন্যরা এসব প্রকল্প গ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়।

(বিএম/এলপিবি/আগস্ট ২২, ২০১৫)