পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি : পীরগঞ্জের অর্ধশতাধিক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা-মামলা, দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার বেহাল অবস্থা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্বের প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপরে আছড়ে পড়ায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬ টি, নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭টি, নন-এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮ টি এবং দাখিল মাদরাসা- ৩২টি, নন-এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসা- ১০ টি রয়েছে। এখানকার অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে মামলা-মোকদ্দমা ও দ্বন্দ্বের কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলানোর ঘটনাও ঘটেছে। প্রাতিষ্ঠানিক মামলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও বিবাদী করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকার দলীয় কম অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি, সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যের ডিও লেটারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে মনোনয়ন নিচ্ছে। ডিও লেটারকে কেন্দ্র করেই বিদ্যালয় প্রধান, শিক্ষক-অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর সাথে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, তথ্য গোপন করে কিংবা গোপনে নিয়োগ প্রদান, পদোন্নতি প্রদানে মোটা টাকার ভাগাভাগি, রাজনৈতিক হিংসা-বিদ্বেশ, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-দাতা সদস্যদের স্বীকৃতি না দেয়া, মামুলী বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা বেতনভাতা বন্ধ-কর্তন করা নিয়েও বিরোধ হচ্ছে। উল্লেখিত ঘটনার কারণে তা মামলায় গড়াচ্ছে। পাশাপাশি সরকারী বরাদ্দ আত্মসাত করার ঘটনায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মামলা চলছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। উপজেলার গুর্জিপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুর বালিকা বিদ্যালয়, রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাটগ্রাম দাখিল মাদরাসা, ধর্মদাসপুর আমিনিয়া মাদরাসা, ঝোরারঘাট শাহ ছালেকিয়া দাখিল মাদরাসা, কাশিমপুর দারুল আমান সিদ্দিকিয়া মাদরাসা, মন্ডলের বাজার দাখিল মাদরাসা, কুমেদপুর বালিকা বিদ্যালয়, কুমারপুর নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চান্দের বাজার উচ্চ বিদ্যালয, হাজী বয়েন উদ্দিন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সাতগড়া বালিকা বিদ্যালয়, শাহাপুর দালিখ মাদরাসাসহ অর্ধ শতাধিক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মামলা-দ্বন্দ্ব চলছে। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় গঠিত ‘উপজেলা শিক্ষা রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রীর বড় জা আলহাজ্ব বেগম রওশন আরা ওয়াহেদ বলেন- কুচক্রীদের হাত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুক্ত করতে অভিভাবক-এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। উপজেলা বাশিস’র সাধারন সম্পাদক আবু আজাদ বাবলু বলেন- বিভিন্ন কারণে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মামলায় জড়ানোর ফলে পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয় হতে পারে।

অপরদিকে প্রায় দেড়যুগ আগে উপজেলার চান্দের বাজার মেধা বিকাশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পীরগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদরাসা, লক্ষীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নছিমনপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গন্ধ্রর্বপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরনাথপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুধিয়াবাড়ী নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধনপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঘাসিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চতরা মডেল বালিকা বিদ্যালয়, শাহ্ ইসমাইল গাজী (রঃ) নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জলাইডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চৈত্রকোল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাজিপুর বালিকা দাখিল মাদরাসা, হরিণ শিং বাজার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৩৫ টি নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। অনগ্রসরমান এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ওই বিদ্যালয়গুলো পাঠদান করলেও সেগুলো আজও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ইতিমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলহাজ্ব মাহতাব হোসেন বলেন- মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং কয়েকটি নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় উপবৃত্তির সোয়া ৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ঢাকার মিরপুর ক্যাডেট কোচিংয়ের পরিচালক মোঃ আকমল হোসেন বলেন- মামলা মোকদ্দমায় জড়ানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তি করে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করা দরকার। মামলার কারণে পীরগঞ্জে শিক্ষার হার কমতে বসেছে। পীরগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম পিন্টু জানান- সংসদ সদস্যের দেয়া ডিও লেটারকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিরোধ চলছে। শিক্ষিত, গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত করলে শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত এগিয়ে যাবে। উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি এ্যাড. কাজী লুমুম্বা লুমু বলেন- বিদ্যালয়ে মামলার কারণে পীরগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।

(জিকেবি/পি/অাগস্ট ২৩, ২০১৫)