রাণীনগর ও নাটোর বাইপাস সড়ক পরিনত হয়েছে গো-চারন ভূমিতে
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর-নাটোর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন এবং বগুড়ার সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প সড়কের জন্য বিগত ২০০৫ সালে শুরু হয় নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর বাইপাস মহাসড়কের নির্মান কাজ।
সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হওয়ার পর ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। কিন্তু প্রায় ১০বছর অতিবাহিত হলেও বাকি অংশের নির্মাণ কাজ আর শুরু হয়নি। এতে নওগাঁ থেকে নাটোর যোগাযোগে অত্র এলাকার দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।
এলাকাবাসী এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের জন্য ২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সীমিত আকারে ৫০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাটোরের নলডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ওই অর্থায়নে ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত পূর্ব নওগাঁর নিউ শাহাপুর ঢাকা রোড মোড় থেকে নাটোরের নলডাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়। মহাসড়কের নওগাঁ অংশের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়। আর নাটোর অংশের সাড়ে ২২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়। নতুন করে অর্থায়ন না হওয়ায় মোট ২৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হওয়ার পর হাইড্রোলজি সমীক্ষার নামে বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ। সড়কটি পাকা না হওয়ায় বাকি সাড়ে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা এখন এলাকাবাসীর গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তার ওপরে কলার বাগান, সবজি চাষসহ বসবাস করছে এলাকাবাসী। এর মধ্যে শুধুমাত্র সান্তাহারের ঢাকা রোড থেকে রাণীনগর রেল স্টেশন পর্যন্ত পাকা করণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এরপর রাণীনগর থেকে নলডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাটসহ অন্য কোন কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় নাটোর থেকে নওগাঁ-সান্তাহার হয়ে বগুড়াতে যাওয়ার জন্যে রাস্তাটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে নওগাঁ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম খান বলেন, এ পর্যন্ত রাস্তাটি নিয়ে বহু টানা-হেঁচড়া হয়েছে। তবে সামনে অর্থবছরে আশা করছি সড়কটির নির্মাণ কাজ আবার শুরু করা হবে। রাজশাহী অঞ্চলের জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বাজেটে ২শ’ কোটি টাকার ডিপিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে এই ২শ’ কোটি টাকার পুরোটাই নওগাঁ-নাটোর সড়কের অসমাপ্ত কাজ ও নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের মান্দা চৌমাশিয়া থেকে নাটোর পর্যন্ত প্রশস্তকরণের কাজে ব্যয় করা হবে। তবে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে অন্তত আরও ছয় মাস সময় লাগবে। তিনি জানান, সড়কটির কিছু অংশ চলনবিল এলাকায় পড়েছে, এজন্য এর স্থায়িত্বের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাইড্রোলজি সমীক্ষা করে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়া হয়। সেই আলোকে মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সমীক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে প্রকল্প তৈরি করে একনেকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এই রাস্তার আত্রাই নদীর ওপর ব্রিজটা ফোর লেনের ব্রিজ হবে। এটা অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এই সড়কটি নির্মিত হলে নওগাঁর সঙ্গে নাটোর ও ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে যাবে। এতে নওগাঁবাসীর যাতায়াতে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে।
নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এই রাস্তাটি নির্মাণ হলে বগুড়ার ওপর নওগাঁর নির্ভরশীলতা কমবে। ঢাকা যাওয়ার জন্য নওগাঁ বাসীর বিকল্প পথ না থাকায় বগুড়া শ্রমিক ইউনিয়ন নানা ভাবে আমাদেরকে জিম্মি করে থাকে। বগুড়ার ওপর দিয়ে যেতে নওগাঁ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিটি গাড়ীকে কমপক্ষে ৪শ’ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর সড়কটি নির্মাণ হলে এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া নওগাঁর সঙ্গে ঢাকার দূরত্বও কমে আসবে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের এমপি মোঃ ইসরাফিল আলম বলেন, এই সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য সংসদে এগারো বার দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। তারপরেও প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। অথচ এর চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে। এই সড়কটির প্রায় অর্ধেক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আর অল্প কিছু টাকা বরাদ্দ পেলেই সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব। এতে এলকাবাসী দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে। এর জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায়ী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
(বিএম/এলপিবি/আগস্ট ২৪৫, ২০১৫)