স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : নেপালেই যেন ফিরে আসছিল সিলেটে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচটি। যেখানে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। দৃশ্য প্রায় একই। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ম্যাচে সমতা। ফলে ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর জয়ী বাংলাদেশ। সেটা ছিল সিলেটের চিত্র। তবে বৃহস্পতিবার নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সের চিত্র ভিন্ন। এবার বাংলাদেশ নয়, জয়ী ভারতই। তবে ম্যাচটি ফাইনাল নয়, সেমিফাইনাল। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে সাডেন ডেথে (নির্ধারিত খেলা গোলশূন্য ড্র) বাংলাদেশকে ৪-৩ ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে গেছে ভারত। কিশোরদের হারের প্রতিশোধটা বাংলাদেশের উপর ভালোই নিল ভারতীয় যুবরা। আগামী ২৯ আগষ্ট শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে ভারত মোকাবেলা করবে স্বাগতিক নেপালের।

প্রথমার্ধ বেশ ভালোই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটাই ছন্দহীন ছিল মাশুক মিয়া জনি শিবির। এই অর্ধে ভারত নিশ্চিত কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তা হলে হয়ত আর ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়াত না। তবে টাইব্রেকারেও বাংলাদেশ ব্যর্থ । আনাড়ি শটের মহড়ায় ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের যুবারা।

প্রথম শটটিই ভারতের হয়ে মিস করেন লালরাম। বলে চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। অথচ প্রথম দুটি শটে সফল ছিল বাংলাদেশ। গোল দুটি করেন অধিনায়ক মাশুক ও রোহিত। কিন্তু এরপর টানা দুটি শটে লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি টিটু বাহিনী। মিস করেন ইব্রাহিম ও ইমন। পঞ্চম শটে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেন মান্নাফ রাব্বি।

ভারত তাদের পঞ্চম শটটিতে গোল দিতে পারলে জিতে যেত। তবে সার্থক গৌলির শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। প্রথম পাঁচ শটে ব্যবধান সমতা থাকে ৩-৩ গোলে। ফলে ম্যাচ গড়ায় সাডেন ডেথে। অর্থাৎ একটি করে শট। যারা ব্যর্থ হবে তারা বিদায়।

সাডেন ডেথে প্রথম শটটি নেন ভারতের ড্যানিয়েল। গোল করেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে সাডেন ডেথের শটটি নিতে আসেন রহমত। কিন্তু বিধিবাম, তার শট চলে যায় পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। ৪-৩ গোলের জয়ে ফাইনালে উঠার আনন্দে তখন উন্মত্ত ভারতীয় শিবির। আর ফাইনালে উঠার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তখন বাংলাদেশ শিবির।

কাঠমান্ডুর এএনএফএ কমপ্লেক্সে সেমিফাইনালের ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় পৌনে চারটায়। জয়ের জন্য দুই দলই খেলেছে আক্রমণাত্মক খেলা। বাংলাদেশ খেলেছে ৫-৪-১ ফরম্যাশনে। অন্যদিকে ভারত খেলছে ৪-৪-২ ফরম্যাশনে।

আক্রমণের শুরুটা করে ভারতই। ১৩ মিনিটে ভারতের লালরামের দুর্দান্ত শট প্রায় ফসকে যাচ্ছিল বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুরের হাত থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত তালুবন্দী করতে পারেন তিনি। ১৭ মিনিটে গোলের মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে রহমতের ক্রসে পা ছোয়াতে পারেনি মান্নাফ রাব্বি। সুবর্ণ গোলের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। এরপর অনেকক্ষণ ম্যাচে আধিপত্য রাখে বাংলাদেশ।

তবে আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিয়ে ৩৭ মিনিটে আক্রমণে যায় ভারত। প্রশান্তের জোরালো শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। তবে তার আগেই অফসাইডের পতাকা তুলে ধরেন সহকারী রেফারি। এরপর প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য আক্রমণ করতে পারেনি কোন দলই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া ছিল দুই দলই। কিন্তু গোলই হচ্ছিল না। ৬৫ মিনিটে গোলের দেখা প্রায় পেতেই যাচ্ছিল ভারত। তবে ভাগ্য গুণে বেচে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের তুলনায় ভালো খেলেছে আসলে ভারতই।

৮৩ ‍মিনিটে সার্থকের দুর্দান্ত শট প্রতিহত করেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে

গোল পেতে পারত ভারত। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। অবশেষে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে শেষ হাসি হেসেছে ভারতই। উঠে গেছে তারা ফাইনালে। আর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠানরত সাফ ফুটবলের এই আসরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে।

এ গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের সঙ্গে আত্মঘাতি গোলে হেরে যায় সাইফুল বারীর শিষ্যরা (২-১)। ফলে রানার্স আপ হিসাবে সেমিতে নাম লেখায় বাংলাদেশ শিবির। অন্যদিকে বি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসাবে সেমিতে উঠে আসে ভারত। দুটি ম্যাচে তারা দাপটের সঙ্গে হারিয়েছে মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে।

দিনের প্রথম সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে স্বাগতিক নেপাল। নেপালের হয়ে অঞ্জন বিস্তা দুটি ও সুনীল একটি করে গোল করেছেন।

বাংলাদেশ দল: আনিসুর (গোলরক্ষক), রহমত, ইমন, টুটুল, মাশুক, রোহিত, শাহরিয়ার, মান্নাফ, ইব্রাহিম, বিশ্বনাথ ও শাকিল।

(ওএস/পি/অাগস্ট ২৭, ২০১৫)