পটিয়া(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাও ও হাবিলাসদ্বীপ এলাকায়  ৬টি  অবৈধ গভীর  নলকূপের কারণে প্রায় ৬’শ নলকূপ নষ্ট  হয়ে পড়েছে। এতে আশে পাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে উপজেলার পানির সংকট নিরসন ও অবৈধভাবে পানি উত্তোলনকারী দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৬ শতাধিক টিউব ওয়েলের মালিক সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে।পটিয়া উপজেলায় মোট নলকূপের পরিমান ৬ হাজার ৭শ ৯২ টি, । এর মধ্যে কোলাগাও ও হাবিলাসদ্বীপ এলাকায় গত দুই বছরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ৫৭৫ টি নষ্ট হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে পানি সংকটের নিরসনের লক্ষ্যে সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী সরকারী টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬ শতাধিক নলকুপ বসানো হলেও পানির সংকট এখনো নিরসন হয়নি। স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট অভিযোগ করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে আছেন।

জানা যায়, উপজেলার কোলাগাওঁ, চরকানাই, পাচুরিয়া, হাবিলাসদ্বীপ, হুলাইন, মনসা, করনখাইন গ্রামের ৫০ হাজারের অধিক গ্রামবাসী নলকূপের খাবার পানির সংকটে ভুগছে । চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব-পশ্চিম পার্শ্বে মিলিটারী ব্রীজ থেকে হুলাইন ছালেহ নুর ডিগ্রি কলেজ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী নয়াহাট এলাকার কৃষি আবাদী জমি ভরাট করে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।

এর মধ্যে মোস্তাফা পেপার মিল, মোস্তাফা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, আম্বিয়া পেপার মিল, আম্বিয়া টেক্সটাইল, আম্বিয়া ডায়িং এন্ড নিটিং মিলস, শাহ আমানত নিটিং এন্ড ডায়িং, শাহ আমানত সিএনজি ফিলিং, এ টি আর ফুড প্রোডাক্স লি:, এ আর এইচ ব্রিক ফিল্ড, বনফুল কোং ও এ আনোয়ারা পেপার মিল, ফোর এস গ্রুপ। বনফুল মিনারেল ওয়াটার কোম্পানীসহ এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার গ্যালান পানি বানিজ্যিকভাবে বিক্রয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।এসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভানে পানি উত্তোলন করে বাজারে বিক্রয় করায় গত কয়েক বছর ধরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পটিয়া অফিস সূত্রে জানা যায় গতবছর ২০১৩ সালে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পানির স্থিতি ছিল ৩২-৩৬ ফিট স্তরে, কুসুমপুরা ইউনিয়নে স্থিতি ছিল ২০-২২ ফিট স্তরে, কোলাগাওঁ ইউনিয়নে ছিল ৩০-৩২ ফিট স্তরে, পৌর এলাকায় ছিল ২০-২২ ফিট স্তরে। ২০১২ সালে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পানির স্থিতি ছিল ২৫-৩৫ স্তরে, কুসুমপুরা ইউনিয়নে স্থিতি ছিল ১৮-২০ স্তরে, কোলাগাওঁ ইউনিয়নে ছিল ২০-৩০ স্তরে, পৌর এলাকায় ছিল ১৮-২১ স্তরে। ২০১১ সালে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পানির স্থিতি ছিল ১৮-২৩ স্তরে, কুসুমপুরা ইউনিয়নে স্থিতি ছিল ১৬-২০ স্তরে, কোলাগাওঁ ইউনিয়নে ছিল ১৮-২৮ স্তরে, পৌর এলাকায় ছিল ১৮-২১ স্তরে। ২০০৯ সালে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পানির স্থিতি ছিল ১৪ স্তরে, কুসুমপুরা ইউনিয়নে স্থিতি ছিল ১৪ স্তরে, কোলাগাওঁ ইউনিয়নে ছিল ১৫ স্তরে, পৌর এলাকায় ছিল ১৪ স্তরে। ২০০৬ সালে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পানির স্থিতি ছিল ১৫ স্তরে, কুসুমপুরা ইউনিয়নে স্থিতি ছিল ১৪ স্তরে, কোলাগাওঁ ইউনিয়নে ছিল ১৪ স্তরে, পৌর এলাকায় ছিল ১৫ স্তরে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বছরে বছরে পানির স্থিতি কমে যাওয়ার ফলে সাধারন মানুষের জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে একটি মহল পানি বিক্রয় করায় এলাকার হাজারের অধিক নলকুপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি( বেলা) এ বিষয়ে হাই কোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহকারী প্রকৌশলী হৃত্বিক চৌধুরী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কারনে পানির স্থিতি বছরে বছরে নিচু স্তরে চলে যাচ্ছে, ইতোমধ্যে যাদের জন্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে তাদের ৬টি কারখানাকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে , এখনো নোটিশের জবাব পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলী চৌধুরী ও কোলাগাও ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম বলেন, এলাকার মানুষ খাবার পানি হা হাকার চলছে গ্রামের সব টিউব ওয়েল গত দুই এক বছরের মধ্যে নষ্ঠ হয়ে গেছে খাবার পানির নিশ্চিয়তার দাবীতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে আসলেও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ফেরদাউস চৌধুরী বলেন, এলাকায় খাবার পানির সংকটের নিরসনে সরকার কোন ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে রাজ পথে কর্মসুচী পালন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভীন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছি। ভবিষ্যতে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ৪-৬ ইঞ্চি ব্যাসের নলকূপগুলো বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এনইউ/জেএ/মে ২৩, ২০১৪)