নিউজ ডেস্ক : পাল্টাচ্ছে আবহাওয়া। দিনে বা রাতের শুরুর দিকে তাপমাত্রা যেমনই থাকুক না কেন, রাতের শেষভাগে ঠান্ডা পড়ছে। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে সাধারণভাবেই কিছু অসুস্থতা দেখা যেতে পারে। বড়দের পাশাপাশি এসব অসুখে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরাও।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর সঠিক সময়ে টিকাদানের মাধ্যমে শিশুদের অসুস্থতার হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

জ্বর, কাশি, সর্দির মতো সমস্যাগুলো এ সময় বেশি হয়ে থাকে। এসবের পাশাপশি শিশুদের নিউমোনিয়ার ভয়ও থাকে। দুই বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ব্রঙ্কিওলাইটিস নামের রোগও হতে দেখা যায়। যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের সমস্যা এ সময় আরও বাড়তে পারে।

করণীয়
সাঈদা আনোয়ার জানালেন, জ্বর যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, তাহলে প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে শিশুকে। তবে এই সিরাপের পরিমাণ হতে হবে শিশুর শরীরের ওজন অনুযায়ী। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ শিশুকে দেওয়া হলে শিশুর বিভিন্ন অসুবিধা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া উচিত।
অনেক মা-বাবা নিজেরাই শিশুদের অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন, এটি একেবারেই ঠিক নয়। এভাবে না বুঝে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিলে শিশু অতিরিক্ত ঘুমায় এবং খাওয়াদাওয়া করতে চায় না। এতে তার অসুস্থতা আরও বাড়ে।
ঠান্ডা লেগেছে বলে শিশুকে ভারী কাপড়চোপড় পরিয়ে রাখতে হবে তা নয়। ওর জন্য আরামদায়ক পোশাকই বেছে নিন এ সময়। আর যেসব শিশু মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও খায় অর্থাৎ যাদের বয়স ছয় মাসের বেশি, তাদের লিকার চা বা লেবু চা দেওয়া যেতে পারে। তবে প্রচণ্ড কাশি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

শিশুর গোসল
কেউ কেউ ভাবেন রোদ না উঠলে শিশুকে বুঝি গোসল করানোই যাবে না। শিশুকে গোসল করানোর সময় গরম পানি ব্যবহার করা উচিত কি না, এ নিয়েও প্রচলিত আছে নানা ধারণা। সাঈদা আনোয়ার জানালেন, শিশুকে গোসল করানোর সময় আবহাওয়া ঠান্ডা মনে হলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। আবহাওয়া স্বাভাবিক মনে হলে সাধারণ তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করলেও ক্ষতি নেই কোনো। শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে পারেন, আবার এক দিন পর পর গোসল করালেও সমস্যা নেই।

নবজাতকের জন্য
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধই প্রথম এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার। জন্মের পর শালদুধ এবং প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার মাধ্যমেই শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়।

নবজাতকের গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। যেসব শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয় এবং যাদের জন্মের সময় ওজন আড়াই কেজির কম হয়, তাদের কয়েক মাস বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে দু-এক দিন গোসল করালেই চলবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় তার শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে পারেন।

প্রতিরোধের উপায়
* শিশু খেলতে খেলতে ঘেমে যেতে পারে। ঘামে ভেজা কাপড় পাল্টে দিন।
* ঠান্ডা বাতাসে শিশুকে ঘরের বাইরে নিয়ে না যাওয়াই ভালো।
* আলো-বাতাসসমৃদ্ধ ঘরে রাখুন শিশুকে। একেবারে বদ্ধ ঘর শিশুদের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
* ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
* শিশুদের ধুলাবালু ঘাঁটতে দেওয়া ঠিক নয়।
* রাতের শেষভাগে একবার ঘুম থেকে উঠে শিশুর গায়ে কাঁথা দিয়ে দিন। ঘুমাতে যাওয়ার সময় তার ঠান্ডা না লাগলেও ভোরে ঠান্ডা লাগতে পারে। শিশুর পায়ের কাছেই কাঁথাটি রাখুন। শিশু একটু বড় হলে নিজেই সেটি সময়মতো গায়ে টেনে নিতে পারবে।
* রাতের শেষভাগে ঘরের ফ্যান বন্ধ করে দিন। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালালে ওই সময় সেটি বন্ধ করে দিন অথবা সেটির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখুন।

যারা শ্বাসকষ্টে ভোগে
আপনার শিশু কিসের সংস্পর্শে এলে শ্বাসকষ্টে ভোগে, তা বের করার চেষ্টা করুন। কোনো কোনো শিশুর ঠান্ডা পানি খেলে শ্বাসকষ্ট হয়, আবার ধুলাবালু বা ঘরের কার্পেট হতে পারে এর উৎস। কারও ঘেমে যাওয়া অবস্থায় বেশিক্ষণ ঘেমে থাকার ফলে সমস্যা হতে পারে। এসব শিশুকে কোনো অবস্থাতেই ঘামে ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকতে দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া যে শিশুর যেটিতে সমস্যা হয়, তাকে সেই জিনিসটি থেকে দূরে রাখতে হবে।

মডেল : মহিমা রশীদ

(ওএস/এএস/আগস্ট ৩০, ২০১৫)