শরীয়তপুর প্রতিনিধি: লিবিয়া থেকে ইতালী যাওয়ার পথে লিবিয়ার উপকুলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে উদ্ধারকৃত নিহত বাংলাদেশী ২৪ যাত্রীর মধ্যে ৪ জন শরীয়তপুর জেলার যাত্রী।

এর মধ্যে নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের কাজি শুকুর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান কাজীর ছেলে জাকির হোসেন কাজী (৪০) ও ভুমখাড়া গ্রামের নান্নু ঢালীর ছেলে সুমন ঢালী (২৫)-র পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকী ২ জনের নাম ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি। নিহতের বাড়িতে বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। তারা নিহতের মরদেহ ফিরে পাবার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছে।

নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত জাকির কাজী দীর্ঘ ৪ বছর পূর্বে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ২০ শতাংশ জমি বিক্রি করে মিশর গিয়েছিল। সেখানে ২ বছর কাজ করে লিবিয়া চলে যায়। লিবিয়ার বেনগাজিতে ২ বছর কাজ করে গত বুধবার জাকির হোসেন তার স্ত্রী ও মায়ের সাথে শেষ কথা বলে ইতালীর উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠে। এরপর আর তার কোন খবর নেই। পরে স্বজনেরা টেলিভিশনে দেখতে পায় জাকির কাজি মারা গেছে। আর সুমন ঢালি দেড় বছর পূর্বে লিবিয়া গিয়েছিল। গত বুধবার শেষ বারের মত তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে সে ইতালীর উদ্দেশ্যে নৌকা যোগে পাড়ি জমায়। পথিমধ্যে লিবিয়ার উপকুলে ভুমধ্য সাগরে ২টি নৌকা ডুবিতে বহু লোক মারা যায়। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দুতাবাস উদ্ধারকৃতদের মধ্যে শরীয়তপুর জেলার জাকির হোসেন, সুমন ঢালী, স্বপন ও আজাদ নামের মোট চার জনের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের কোন ঠিকানা জানাতে পারেনি দুতাবাস। শরীয়তপুরের গণমাধ্যম কর্মীরা দুজনের ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারলেও বাকি আজাদ ও স্বপনের ঠিকানা পাওয়া যায়নি। নিহত জাকির হোসেন ও সুমন ঢালীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। স্বজনেরা তাদের লাশ সরকারের মাধ্যমে দেশে আনার দাবি জানায়।

জাকিরের জান্নাত নামের ৮ বছরের একজন কন্যা ও জাহিদ নামের ৬ বছরের একজন পূত্র সন্তান রয়েছে। জান্নাত স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণি ও জাহিদ শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের সামনে এখন ঘোর অন্ধকার।

কান্না জড়িত কন্ঠে জান্নাত বলে, “আমার বাবা মরে গেছে, এখন আমাদের কে দেখবে। আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো। আমরা এখন কিভাবে পড়ালেখা করব। তোমরা আমার বাবার লাশটা আমার কাছে এনে দাও। আমি আমার বাবার মুখটা শেষ বারের মত একবার দেখতে চাই”।

জাকিরের মা রাবেয়া বেগম, স্ত্রী মনতারা বেগম, ভাই আনোয়ার হোসেন সরকারের কাছে আকুল মিনতি জানিয়েছে দ্রুত সময়র মধ্যে জাকিরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে। এছাড়া একই উদ্দেশ্যে ট্রলার যাত্রী জেলার রাহাপাড়া গ্রামের সুমন বেপারী, হালইসার গ্রামের ইয়াকুব ও বিল্লাল, বাংলাবাজার গ্রামের জসিম উদ্দিন ও একই উদ্দেশ্যে নৌকায় করে ইতালী রওনা করেছিল। তারাও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে সুমন ঢালীর বাড়িতে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। সুমনের মা হনুফা বেগম শনিবার রাত থেকে সংজ্ঞা হারিয়ে অচেতন অবস্থায় পরে রয়েছেন।

সুমনের বাবা নান্নু ঢালী বলেন, আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ সৌদি আরবে কাজ করি। অনেক কষ্টে টাকা পাঠিয়ে দেড় বছর আগে সুমনকে লিবিয়া পাঠিয়েছিলাম। লিবিয়া থেকে ওই দেশের দালালের মাধ্যমে বুধবার নৌকা যোগে ইতালীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে আমাদের সাথে ফোনে কথা বলে। এরপর আর ওর সাথে কথা হয়নি। শনিবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর জানতে পারি অনেকের সাথে সুমনেরও নাকি সলীল সমাধী হয়েছে। আমি সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সকলের সাহায্য চাই ।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, আমি ঢাকা থেকে জানতে পেরেছি বৃহস্পতিবার লিবিয়া উপকুলে নৌকা ডুবিতে নিহত ২৪ বাংলাদেশীর মধ্যে শরীয়তপুরেরও ৪ জন রয়েছেন। তাদের শুধুমাত্র নাম জানাতে পেরছেন লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস। তাদের পরিচয় বা ঠিকানা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। নিহতের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আমি যোগাযোগ অব্যাহত রাখবো।

(কেএনআই/এলপিবি/আগস্ট ৩০, ২০১৫)