খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্রে অবৈধভাবে নিজ মেয়ের নাম্বার বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ পোদ্দারকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছে। বদলি করে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্তি করা হয়েছে। দুদকের তদন্তেও অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দ্বিতীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ পোদ্দারের মেয়ে বৃষ্টি পোদ্দার জেলার সদর উপজেলার নতুনকুঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল থেকে গত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। শিক্ষা কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রমেন্দ্র নাথ পোদ্দার নিজের মেয়ের খাতায় নাম্বার বাড়ান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি পোদ্দারের খাতার পরিচিতি কোড নম্বরের সর্বশেষ সংখ্যা হলো-৪৬৬। বৃষ্টি পোদ্দার বাংলাতে পেয়েছিল ৬৩ সেখানে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০, গণিতে পেয়েছিল ৬৭ সেখানেও করা হয় ৮০, ইংরেজিতে পেয়েছিল ৬৭ সেখানে করা হয়েছে ৯৪ এবং বিজ্ঞানে পেয়েছিল ৭৫ সেখানেও করা হয় ৯৪।

এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মাহাবুবুর রহমান বিল্লাহ এবং অতিরিক্ত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মিজানুর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সম্প্রতি রমেন্দ্র নাথ পোদ্দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এ তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে রমেন্দ্রনাথ পোদ্দারকে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষা অধিদপ্তরে বদলি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকালে মাহাবুবুর রহমান বিল্লাহ রমেন্দ্র নাথ পোদ্দারের তাৎক্ষণিক বদলির আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ১৭ মে তিনি বদলির আদেশ পেয়েছেন।

এদিকে দুর্নীত দমন কমশিনের তদন্তেও ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা রিসোর্স ইনস্ট্রাক্টরসহ ২৫ জন পরীক্ষক, নীরিক্ষক ও প্রধান পরীক্ষককে দুদকের রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে দুদকের রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম খাগড়াছড়ি এসে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ১৮৭টি খাতার ফটোকপি সংগ্রহ করেন।

দুদক কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জানান, কাগজপত্র পর্যালাচনা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যে শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি মূলত ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধ। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

রিয়াজুল ইসলাম জানান, তদন্তে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র পোদ্দারের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। রমেন্দ্র পোদ্দার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন।

(ওএস/এইচআর/মে ২৪, ২০১৪)