নড়াইল প্রতিনিধি: শনিবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী।

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর)। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে, মতান্তর রয়েছে।

১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণপণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ। ৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুঁড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা, ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে আছেন।

এ বীরের সম্মানার্থে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন।

এদিকে, ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নূর মোহাম্মদের বাড়িতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। নূর মোহাম্মদের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

(টিএআর/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫)