আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রস্থ রানওয়ের মধ্যেই চরম ঝুঁকি নিয়ে বরিশাল বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করছে। ফলে যেকোন সময় বড় ধরনের বিমান দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। রানওয়ের প্রস্থ কম হওয়ায় অতিসম্প্রতি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা যাত্রীবাহি বিমান এখানে অবতরণ করতে না পেরে ঢাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বিমানবন্দরে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী রানওয়ে নেই। অথচ আকাশ পথে এ রুটে চলাচলকারী ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের বিমান বাংলাদেশ ও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়ন করছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিটার। যার প্রস্থ হবে কমপক্ষে ৪৫ মিটার। কিন্তু বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও প্রস্থ মাত্র ৩০ মিটার যা প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ মিটার কম। পাশাপাশি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং (আরএফএফ)’র দুটি যান থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একটি। অগ্নিনির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই। রহস্যজনক কারণে এসব নির্দেশনা না মেনেই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এ বিমানবন্দরে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।

সিভিল এভিয়েশনের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ছোট এ বিমানবন্দরের রানওয়েতে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়ন চরম ঝুঁঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরে রানওয়ের প্রস্থ প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ মিটার কম। ফলে ঘণ কুয়াশা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এমনকি আকাশে মেঘ বেশি থাকলে এ ধরনের উড়োজাহাজ অবতরণের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পাইলটদের।

অভিযোগ রয়েছে, গত অর্থবছরের বাজেটে বরিশাল বিমানবন্দরসহ সবগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে স¯প্রসারণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ৭’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের একজন প্রভাবশালী সদস্যের একগুঁয়েমির কারণে রানওয়ে সম্প্রসারণতো দূরের কথা উল্টো গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ না করেই বাজেটের ১৯০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন-এমপি বলেন, নিরাপত্তার সবদিক খেয়াল রেখেই এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিমানবন্দরের রানওয়ের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে।

বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ইউএসবাংলার উড়োজাহাজটি রানওয়ের বাহিরে ছিটকে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল রানওয়ের কম প্রস্থ। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটের পাশাপাশি ঢাকা-রাজশাহীতে তিনটি, ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রুটগুলোয় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবহরে রয়েছে দুটি ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ।

(টিবি/এএস/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫)