সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : গলায় ওড়না জড়িয়ে স্ত্রী ও কন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায়  গ্রেফতারকৃত আব্দুর রউফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম আকরাম হোসেনের খাস কামরায় সে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় এ  জবানবন্দি প্রদান করে।

বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে আব্দুর রউফ উল্লেখ করেছেন যে, নলতা ইউনিয়নের গুল্লীর বিলে তার ৪৫ বিঘার একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে । ওই ঘের সে নিজেই দেখাশোনা করে। বিয়ের পর থেকে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মায়ের (শ্বাশুড়ি) সঙ্গে ভাল আচরণ করতো না। মা বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাকে সেবা শ্র“শসার জন্য বলা হলে সাবিনা সেখানে যেতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে সে তার (সাবিনা) মা জাহানারার সঙ্গে ১৪ দিন আগে বাপের বাড়িতে চলে যায়। এ নিয়ে সে ক্ষুব্ধ ছিল। এরপরও সে মেয়েকে দেখার জন্য মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়িতে (তারালি) যেত।

রউফ আরো জানায়, সোমবার রাত ৮টার পর থেকে গুল্লীরবিলের ব্রীজের পাশে শফিকুলের চায়ের দোকানের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে এক রাউণ্ড কলব্রীজ খেলে সে। এরপর জি বাংলায় পাখি সিরিয়াল দেখার জন্য রাত ৯টায় বাড়িতে পৌঁছায়। খাওয়া দাওয়া শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে সাড়ে ১০টার দিকে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছায়। মাকে অবহেলা করায় পথিমধ্যে তার মাথায় খুন চাপে। স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি খেতে বললে বাড়ি থেকে খেয়ে আসার কথা বলে সে শুয়ে পড়ে। নিজে ঘুমের ভান করে স্ত্রী সাবিনা ঘুমিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে স্ত্রীর শরীরে জড়ানো লাল রঙের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে একই ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকিকে(২)। পরে মেয়ের মরদেহ মায়ের মরদেহের বাম হাতের উপর রেখে সে ঘর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি ফেরে। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ তাকে আটক করে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক অমল কুমার রায় আব্দুর রউফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একটি মটর সাইকেল যৌতুক হিসেবে না দেওয়ায় কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ মাষ্টারের ছেলে আব্দুর রউফ সোমবার রাতে শ্বশুর বাড়িতে যয়ে স্ত্রী ও কণ্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে পরদিন কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সাবিনা ইয়াসমিনের মা জাহানারা বেগম।

সোমবার গভীর রাতে পুলিশ আব্দুর রউফকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্ত্রী ও কণ্যাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। সে অনুযায়ি তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য সাতক্ষীরা আদালতে আনা হয়।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৫)