নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে চোরাইপথে ফের আসতে শুরু করেছে গবাদীপশু। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার রাত থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধে বিজিবির নির্দেশনা অমান্য করে রাতের আঁধারে চোরাই পথে এদেশের রাখাল ভারতের অভ্যন্তরে গরু আনতে যাচ্ছে।

সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী রাখালের হতাহতের আশংকা আবারো দেখা দিয়েছে। শুধু গবাদীপশুই নয়, সীমান্ত পেরিয়ে রীতিমত ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আমদানীতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে মাদকব্যবসায়ী চোরাকারবারীরা।

জানা গেছে, সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে চোরাই পথে গরু-মহিষ পাচার করে নিয়ে আসার পথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নির্যাতনে ৫/৬ জন রাখাল নিহত হয়ে ছিল। বিশেষ করে উপজেলার হাঁপানিয়া, কলমুডাংগা ও আদাতলা সীমান্তে পর পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উল্লে¬খিত সীমান্ত এলাকা গুলোতে বিএসএফ কর্তৃক হত্যা নির্যাতন প্রতিরোধে সীমান্তে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া নজরদারী আরোপ করেন। এছাড়া ওই সকল সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সীমান্ত আইন ও বৈধ পন্থায় গবাদী প্রাণী আমদানীর বিষয়ে বিজিবি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা দিকনির্দেশনা মূলক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। ফলে বিজিবির মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত জোয়ানরা সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে প্রায় দেড় মাস ধরে উপজেলার হাপানিয়া, কলমুডাংগা, আদাতলা, বামনপাড়া, সুন্দরইল, সোনাডাংগাসহ পার্শ্ববর্তী পত্নীতলার হাটশাওলী, রাধানগর, শীতলমাঠ সীমান্তে গরু-মহিষ আমদানী একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

এতে পাচারকারী চক্রের পাশাপাশি মধ্য স্বত্বভোগী একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ কমিশন ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ওই চক্রটি চোরাচালানী কাজের জন্য উপজেলার সকল সীমান্তের আন্ডার গ্রাউন্ড ইজারা গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ওই প্রভাবশালী মহল সীমান্ত দিয়ে আমদানীকৃত প্রতি জোড়া গরু-মহিষের জন্য ৩ হাজার টাকা কমিশন নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে মোতাবেক প্রতি জোড়ার জন্য আদায়কৃত ৩ হাজার টাকা থেকে তারা করিডোর ফি বাবদ সরকারি কোষাগারে ১ হাজার ৫০টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা কথিত হাইকমান্ডের খরচ দেয়ার অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়াও আমদানীকৃত গরু-মহিষ করিডোর ছাড়াই বাইপাস করে তারা দেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব না দিয়ে নিজেরা হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনগত রাতে উপজেলার হাপানিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাইপথে স্থানীয় মিরাপাড়া দিঘীর হাটের বাসিন্দা মৃত আত্তাব আলীর ছেলে মানিক মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক রাখাল ভারতের ৫কিলোমিটার অভ্যন্তরে গিয়ে ৭৮ টি গরু ও মহিষ পাচার করে এনে হাপানিয়া বিজিবি ক্যাম্পের সামনে বেঁধে রাখে। অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা ওই গরু মহিষের জন্য তারা বিজিবির নিকট থেকে করিডোর টোকেন ইস্যুর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে । এ দিকে উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না আসায় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে ওই গরু-মহিষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।

সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার বাইরে হঠাৎ করে কি ভাবে চোরাই পথে এ বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাপানিয়া বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার সিরাজ কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ ঘটনায় সকাল থেকে ব্যবসায়ী ও রাখালদের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে ওই ৭৮ টি গবাদী পশুর করিডোর করার জন্য হাপানিয়া বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে করিডোর টোকেন ইস্যু করা হয়। সাপাহার উপজেলার সকল সীমান্তে এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ড চলতে থাকলে আবারো সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী রাখালের হতাহতের ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫)