কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সিমলাইকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছে শিক্ষকরা। ক্লাসবর্জন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এ কারনে সোমবার বিদ্যালয়ে কোন ক্লাস হয়নি। রোববার রাতে আহত প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শানু, দেলোয়ার হাওলাদার, আবুল বসার ও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ওহাব মিয়ার বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় অভিযোগ দাখিল করেছে।

জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের রুমে শিক্ষক নিয়োগের টাকার বাটোয়ারা নিয়ে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সিমলাইকে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ ঘটনায় রোববার থেকে অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষকরা। ক্লাসবর্জন করে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ছাত্র-ছাত্রীরা।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতী অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে শুধু অষ্টম শ্রেনীর টেষ্ট পরীক্ষা চলছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের কর্মবিরতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তারাও ক্লাসবর্জন অব্যাহত রেখেছে।

একাধিক ছাত্র-ছাত্রী জানান, প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনা তারা মেনে নিতে পারছেন না। যারা মারধর করেছে তাদের সন্তানরাও স্কুলে লেখাপড়া করছে। তাই শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের ক্লাসবর্জন অব্যাহত থাকবে।

এদিকে একাধিক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত ও মারধর করার কথা শুনে তারাও মর্মাহত। কিন্তু এভাবে ক্লাসবর্জন ও শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদেরই ক্ষতিহবে। কারন আগামী ১ অক্টোবর দশম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের টেষ্ট পরীক্ষা শুরু হবে।

জানা যায়, গত ২৭ জুন বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন, সহকারী লাইব্রেরীয়ান অসীম চন্দ্র হাওলাদার, ফিজিক্যাল টিচার মোসাঃ ফাহিমা ও কম্পিউটার শিক্ষিকা হিসেবে তৃষ্ণা রানীকে নিযোগ দেয়া হয়। চার শিক্ষকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা করে ছয় লাখ টাকা আদায় করে বিদ্যালয়ের ফার্নিচার ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য প্রধান শিক্ষককে চাপ প্রয়োগ করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাদের কথা না শোনায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে তাকে চেয়ার দিয়ে টিটিয়ে আহত করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শানু জানান, তারা বিদ্যালয়ের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ওই চার শিক্ষকের কাছ থেকে ডোনেশন নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তারা শিক্ষককে মারেন নি বলে জানান।
আহত প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র সিমলাই জানান, নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষদের কাছ থেকে ঘুষ না নেয়ায় তার উপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় তিনি এখন উদ্বিগ্ন। কারন হামলাকারীরা সবাই প্রভাবশালী। তাই থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন।

কলাপাড়া থানার ওসি(তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রধান শিক্ষকের একটি অভিযোগ পেয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। তারা অভিযুক্তদের ধরার জন্য এলাকায় গিয়েছেন। কিন্তু কাউকে আটক করতে পারেন নি।

(এমকেআর/এসসি/সেপ্টেম্বর১৪,২০১৫)