তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ -এ তাড়াশ আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, উপকরণ, পোশাকের টাকা, প্রশ্নপত্রে টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত শনিবার আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ওছমান গনি ৩জন শিক্ষিকার ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছে।

শিক্ষকরা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর অর্থলোভী ওই টিসি ওছমান গনি’র তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ট বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন জানিয়েছে। এনিয়ে গতকাল রোববার ইউএনওর কার্যালয়ে বৈঠক বসে। বৈঠকে ৩জনের টাকা নেওয়ার কথা ও পরে তা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে টিসি। এতে আবারও প্রমানিত হল প্রতিবেদন ছিল সত্য ও বস্তুনিষ্ট।

সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানাগেছে, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় চলনবিলের তাড়াশ উপজেলায় ১২১টি আনন্দ স্কুলের মধ্যে ১৯টি স্কুলের শিক্ষকের বেতন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা উপকরন ও পোষাক বরাদ্দ বন্ধসহ ১৩টি আনন্দ স্কুলের সকল কার্যক্রম সম্পুন্ন রুপে বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষকের নিকট থেকে বেতন ভাতা দেওয়া কথা মোটা অংকের টাকা নেওয়া অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষক শিক্ষিকার ৮মাস থেকে ১১মাস ধরে বেতন ভাতা, শিক্ষা উপকরণ, উপবৃত্তি ও পোষাকের টাকা বন্ধ রাখায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন ও ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার প্রতি অনীহা প্রকাশ করছেন।

শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ওছমান গনি সরকার তাড়াশে আনন্দ স্কুলের টিসি হিসেবে যোগদান করার পর থেকে শিক্ষক হয়রানী, বেতন ভাতা আটকে রেখে টাকা আদায়, ছাত্রছাত্রীর উপকরণ ও পোষাকের বরাদ্দ থেকে টাকা কর্তনসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরে। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেও তার কোন কুল কিনারা করতে পারে নাই। শিক্ষকদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বেতন ভাতা এনে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষকদের নিকট থেকে ৫হাজার থেকে ৭হাজার পর্যন্ত টাকা আদায় করেন। বেতন লোভের আশায় শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে টিসি ওছমান গনিকে টাকা দেয়। এ নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত দৈনিক যুগের কথা পত্রিকাসহ বিভিন্ন অন লাইন পত্রিকায় ধারাবাহিক ৫টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টিসি ওসমান গনির টনক নরে। শিক্ষকরা তার দুর্নীতির প্রতিকার ও টাকা ফেরত চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অধিদপ্তর থেকে তার দুনীতির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন হবার পর টিসি ওসমান গনি নিজের চাকুরী বাচাতে বিভিন্ন মহলের ও রাজনৈতিক ভাবে তদবীর শুরু করেছে।

অবশেষে গত শনিবার তাড়াশের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির মেয়ের মাধ্যমে ২জন শিক্ষকের টাকা ফেরত দিয়েছে। তদন্তে সময় শিক্ষকরা যাতে মুখ না খোলে সে জন্য তাদের মধ্যে ভাদাস আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা কুলসুম খাতুন ও রংমহল আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা রোকেয়া খন্দকারের টাকা গত শনিবার দিন ফেরত দিয়েছে। এর আগে শাহানাজ নামে আরেক শিক্ষিকার টাকাও ফেরত দিয়েছে। বাকী শিক্ষকরা তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকট অভিযোগ দিলে ইউএনও টিসিকে ডেকে বসেন। গতকাল রোববার আনন্দ স্কুলের শিক্ষক ও আনন্দ স্কুলের টিসি ওছমান গনির বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাকীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য টিসিকে নিদের্শ দেন। বৈঠকে আনন্দ স্কুলের টিসি ওছমাস গনি টাকা নেওয়ার কথা এবং ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করে। ইউএনও টিসিকে শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেওয়ার পর দ্রুত তাড়াশ থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন। এদিকে ইউএনও অফিস থেকে বের হবার পর টিসি ওছমান গনি শিক্ষকদের তোপের মুখে পরার ভয়ে পালিয়ে গেছে।

(এটিপি/এসসি/সেপ্টেম্বর২০,২০১৫)