চৌধুরী আ.হান্নান : কিছু দিন পূর্বে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে-সরকারি ব্যাংকের একটি শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকার জালনোটসহ এক ক্যাশিয়ারকে আটক করেছে পুলিশ। খবরটি ছোট কিন্তু এর সুপ্ত কর্মক্ষমতা ব্যাপক। ঐ ক্যাশিয়ারের পরিনতি কি হয়েছিল তা অবশ্য পত্রিকান্তরে আর জানা যায়নি। তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বেচারার হয়ত চাকুরিটা গেছে অথবা যোগাযোগটা ভাল থাকলে কিছুই হয়নি। অন্য একটি শাখায় বদলি হয়েছে মাত্র।

জালনোট, জালটাকা তৈরির মেশিন-যন্ত্রপাতিসহ কয়েকজন গ্রেফতার- এ জাতীয় খবর আমরা প্রায়ই পত্রিকায় দেখতে পাই। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সচিত্র প্রত্যক্ষ করি। কিন্তু এসব জাল-জালিয়াতির কি বিচার হয়, তা বড় একটা জানা যায় না। আসল নোট আর জাল নোট চিনে আলাদা করা সাধারণ লোকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। প্রতারক চক্র ব্যস্ত হাট বাজার, গরু-ছাগল বেচাকেনার হাট, কোরবানীর হাট ইত্যাদি বেছে নেয়। প্রতারকেরা জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার কারবার নিয়ে সারা বছরই সক্রিয় থাকে।

ব্যবসাটা সহজ, পুঁজি ছাড়া এবং সরাসরি অর্থ উপার্জন। ঝুঁকি আছে কিন্তু লাভ অনেক বেশি। এদের আইনের আওতায় এনে বিচার করে শাস্তি দেয়া দুরূহ। আইনের দুর্বলতা, ফাঁকফোকর দিয়ে এবং বাদি পক্ষের অর্থাৎ সরকার পক্ষের যারা মামলা পরিচালনা করেন তাদের তৎপরতার অভাবে অপরাধী পার পেয়ে যায়।

মানব শরীরে দূষিত রক্ত প্রবেশ করলে যেমন নানা রোগ বালাইয়ের আশংকা থাকে, শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, তেমনি মুদ্রা বাজারে জালটাকা বেড়ে গেলে বাজার অস্থির হয়। দ্রব্যমূল্য বাড়ার প্রবনতা থাকে, মুদ্রা স্ফীতি বাড়ে। সমাজে প্রতারকের দৌরাত্ব বেড়ে যায়। জালনোট বাজারে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করলে দেশের অর্থনীতির উপর কী ধরণের বিরূপ প্রভাব পড়ে তা অর্থনীতিবিদরা ভাল বলতে পারবেন।

জালনোট রোধ করার জন্য বাংলাদেশেব্যাংকের নানা ধরনের উদ্যোগ আছে। প্রতিটি জেলায় সোনালী ব্যাংকের নেতৃত্বে “জালনোট প্রতিরোধ কমিটি” রয়েছে। কমিটি নিয়মিত জালনোট সংক্রান্ত মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে থাকে। এ কমিটির কার্যক্রম জালনোট রোধে কতটা ভূমিকা রাখছে তা দৃশ্যমান নয়। সরকারের অনুমোদিত মুদ্রা ব্যতিত অন্য মুদ্রা বাজারে চালু থাকা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ অর্থাৎ সরকারের মধ্যে আরেক সরকার।

জালনোট যার কাছে পাওয়া যায়, প্রাথমিকভাবে তাকেই অপরাধী হিসেবে ধরা হয়। সেজন্য জালনোট যার হাতে পড়ে সে বিষয়টি চেপে যায়, নানা কারণে পুলিশের নিকট যেতে চায় না। ফলে অপরাধ প্রবনতা হ্রাস পায় না, বরং বৃদ্ধি পায়। আর ব্যঅংকের কোন ক্যাশিয়ার যখন জাল নোট ব্যবসার সাথে জড়িত চক্রের সাথে হাত মেলায় তখন অবস্থা সর্বনাশের চুড়ান্তে পৌঁছাতে বাধ্য।

যার কাছে জালনোট পাওয়া যাবে তাকেই পুলিশে সোপর্দ না করে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজতে হবে। জাল টাকার উৎসের সন্ধানদাতাকে পুরস্কৃত করতে হবে। কঠিন আইন করে অজামিন যোগ্য করতে হবে। সকল ব্যাংকের পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা, প্রচারনা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ব্যঅংকের শত শত শাখা রয়েছে। তারাই মূল ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ নগদ টাকা তো অবিরাম ব্যাংকে প্রবেশ করে এবং বের হয়। সরকারকে তো অনেক বড় বড় সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হয়। বাজারে জালনোটের প্রবাহকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে যত দ্রুত প্রতিহত করা যায় ততই মঙ্গল। অন্যথায় দূষিত রক্তে শরীর অবশ হয়ে আসবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

(মে ২৫, ২০১৪)