গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্র সৌরভের পায়ে গুলির ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মাঝে উত্তেজনা ও ওই এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র ও ০৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল্যাহ আল মামুন জানিয়েছেন।

পুলিশ সুত্রে জানানো হয়েছে, সৌরভের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা সুন্দরগঞ্জের পৌর মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন টেলিফোনে জানান, সৌরভের পিতা হুরাভায়া খাঁ গ্রামের সাজু মিয়া স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ সুন্দরগঞ্জ থানায় ওই সময় উপস্থিত এডিশনাল এসপির কাছে হস্তান্তর করলে তিনি অভিযোগকারীকে সরাসরি থানায় নিয়ে আসার কথা বলেন। সৌরভের পিতা সাজু মিয়া থানায় এলে রাতে অভিযোগটি দায়ের করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, গুলির ঘটনাটি সত্যি। এর যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের হয়নি।

অস্ত্রের অপব্যবহার হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

তবে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শর্টগানের বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এখন ওই অস্ত্র দুটি সংসদ সদস্যের কাছ থেকে জমা নিয়ে তা জব্দ করা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। প্রশাসনের লোকজন এমপির সাক্ষাত পাচ্ছেন না বলেই এখন পর্যন্ত অস্ত্র দুটি জমা নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও জানা গেছে, অস্ত্র দুটি যদি ব্যবহৃত না হয়ে থাকে তবে তা হয়তো ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু অস্ত্র দুটো অবশ্যই জব্দ করা হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গাইবান্ধার-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোঁড়া গুলিতে শুক্রবার ভোরে সৌরভ মিয়া (৯) নামে এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় সৌরভ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সৌরভ ওই উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ গ্রামের সাজু মিয়ার ছেলে। সে হুড়াভায়া খাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

শিশুটি শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় তার এক নিকট আত্মীয়সহ রাস্তায় ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করছিল। সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ভোরে তার নিজস্ব গাড়িতে করে বামনডাঙ্গা থেকে সুন্দরগঞ্জ যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বামনডাঙ্গা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ব্র্যাক মোড়ের পশ্চিম পাশে গোপালচরণ এলাকায় পৌঁছে সাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে জোর পূর্বক তার গাড়িতে উঠাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার অকথ্য গালিগালাজ ও আচরণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তার গাড়িতে না উঠে দৌড়ে পালায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য লিটন তাকে লক্ষ্য করে রিভালবার দিয়ে এলোপাথারি পরপর ৫ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন। এর মধ্যে ২টি গুলি সৌরভের দুই পায়ে গিয়ে লাগে এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাজুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তির পরিধেয় কাপড় ভেদ করে একটি গুলি বেরিয়ে যায়।

(আরআই/এলপিবি/অক্টোবর ৩, ২০১৫)