নিউজ ডেস্ক : স্বাভাবিকভাবে পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু অনেক বেশি। তারা পুরুষের চেয়ে অকেদিন বেশি বেঁচে থাকেন। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে নারীদের এই গড় আয়ুষ্কাল দিনদিন কমে যাচ্ছে।

এর অন্যতম একটি কারণ হল নারীদের সিগারেটে আসক্তি হওয়া। গবেষণায় এমন বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে রাস্তাঘাটে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সিগারেট খেতে দেখা যায়। কিন্তু তামাকযুক্ত সিগারেটটি পুরুষের চেয়ে নারীদের দেহে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর প্রায় প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট তৈরি করা হয় আর প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ সিগারেট খায়। এর মধ্যে প্রতি ১০০ জনে এশিয়ায় প্রায় শতকরা ৪৪ ভাগ পুরুষ ও ৪ ভাগ মহিলা সিগারেট খান। ইউরোপে নারীদের সিগারেট খাওয়ার হার বেশি প্রায় শতকরা ৪৬ভাগ পুরুষ ও ২৬ ভাগ মহিলা। আমেরিকায় এটি প্রায় ৩৫ ও ২২ ভাগ। কিন্তু পশ্চিম মহাসাগরীয় অঞ্চলে সিগারেট মহামারির মত। প্রায় ৬০ ভাগ পুরুষ ও ৮ ভাগ নারী সিগারেটে আসক্ত। বাংলাদেশেও এই আসক্তি কোনো হারেই কম নয়। সিগারেট খাওয়ার ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করছে, যার অর্থ গড়ে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

চলুন তবে দেখে নেয়া যাক সিগারেট খাওয়ার ফলে পুরুষের চেয়ে নারীদের শরীরে যে বিশেষ সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে সেই প্রধান সমস্যাগুলোকে :
১. ক্যান্সার :

সিগারেট খাওয়ার ফলে পুরুষের ন্যায় নারীদেরও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিগারেট ফুসফুসে ‘এমফাইসেমা’ সৃষ্টি করে। ‘এমফাইসেমা’ হলে ধীরে ধীরে ফুসফুস পঁচে যায়। ‘এমফাইসেমা’ রোগীর যখন তখন ব্রংকাইটিস হয়ে থাকে। যেকোনো সময় হার্ট কিংবা ফুসফুসের স্পন্দন বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়া ধূমপানের ফলে ঠোঁট, মুখ, দাঁতের মাড়ি, খাদ্যনালী, শ্বাসনালীতে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। মূত্রথলি, কিডনী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদ্রান্ত্র, মহিলাদের জরায়ু এবং স্তনেও ক্যান্সার হবার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে।
২. হার্টের সমস্যা :

সিগারেট খেলে পুরুষের মত নারীদেরও হার্টেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক ঘটাতে পারে। ধমনীতে বিভিন্ন ব্লকেজ তৈরি করে ফেলে। তখন এনজিওপ্লাস্টি করে আর্টারিতে রিং পরাতে হয়, এই রিং ১০ বছরের মতন থাকে। এরপর অবস্থার উন্নতি না হলে বাইপাস সার্জারি করানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
৩. গর্ভের সন্তানের ক্ষতি :

নারীর একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে সেটি আমরার সবাই জানি অর্থাৎ তারা গর্ভ ধারণ করতে পারেন, মানবশিশু জন্ম দিতে পারেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কোনো নারী ধূমপান করলে ঘনঘন গর্ভপাত, জন্মের আগেই বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে। আর বাচ্চার যদি জন্ম হয়ও দেখা যায় সেই বাচ্চা কম ওজন নিয়ে বা অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহন করে।
৪. ত্বকের সমস্যা :

পুরুষের তুলনায় নারীদেও ত্বক অনেকটাই পাতলা এবং মলিন হয়ে থাকে। অনবরত ধূমপান করলে নারীদেও ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সিগারেটের ধোঁয়াটা সরাসরি তাদেও মুখে গিয়ে লাগে। এর ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। ত্বকে বিভিন্ন ধরনের এ্যালার্জি হয়ে থাকে। ত্বক কালো হয়ে যায় এবং বেশ রুক্ষ হয়ে যায়।
৫. ঠোঁটে দাগ :

নারীদের ঠেঁটের যে লাবণ্যতা বা কমনীয়তা তা সিগারেট খাওয়ার ফলে নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই সিগারেট খেলে ঠোঁট কালো হয়ে যায়। এছাড়া নারীদের ঠোঁটে কালো কালো ছোপ বা দাগ তৈরি হয় যার ফলে নারীদের সকল সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
৬. বয়স বেড়ে যায় :

সিগারেটের কারণে ত্বকে অক্সিজেন কম আসে, ফলে অল্প বয়সে বৃদ্ধদের মত রুক্ষ ত্বকের সৃষ্টি হয়। সিগারেট যেহেতু ত্বককে রুক্ষ করে তোলে তাই দেখা যায় অনবরত সিগারেট খাওয়ার ফলে বিশেষ করে নারীদের বয়স অনেক বেশি মনে হয়। সিগারেটে থাকা নিকোটিনের প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে।
৭. হাড়ের ক্ষয় :

সিগারেট খাওয়ার ফলে হাড়ের ক্ষয় হয়। নারীদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি মারাত্মক। কেননা নারীরা এমনিতেই অস্টিওপরেসিসে ভোগে বেশি, তার উপর ধুমপায়ী নারীরা ১০-১৫% বেশি এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়েন।

(ওএস/এটিআর/মে ২৫, ২০১৪)