বাংলা একাডেমীর বই মেলার তাজা স্মৃতি নিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসের ২৭ তারিখে টরন্টোতে এলাম। মনে তখনো ঢাকায় নিজের কিছুটা লেখালেখির অভ্যাস থাকায় এবং বাঙালী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এলাকায় ঠাঁই নেওয়ায় এখানকার বাঙালী সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে বেশ দ্রুতই সখ্য গড়ে ওঠে।

তখন থেকেই কবি মৌ মধুবন্তীর নাম শুনছি।অবশেষে কবি বন্ধু নিয়াজ শাহিদীর কল্যাণে কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো এবং মজার ব্যাপার হলো কবি তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হাতে করেই সেখানে সেখানে হাজির।সৌভাগ্যই বলব! উপহার হিসাবে একটি বই আমিও পেলাম।কথাবার্তায় সপ্রতিভ কবির বইটিও বেশ আকর্ষণীয়।কড়া রোদের প্রচ্ছদ। চমৎকার কাগজ ও বাঁধাই শুরুতেই সবার নজর কাড়বে। সাবওয়েতে যেতে আসতেই সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কবিতাগুলো সব পড়ে ফেললাম। ভাবলাম, ভালো যখন লেগেছে, কিছু একটা লিখে ফেলি। মৌ মধুবন্তী নোয়াখালীর মেয়ে, কিন্তু বেড়ে উঠেছিল ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৯১ সাল থেকে উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন শহর ঘুরে এসে থিতু হয়েছিল টরন্টোতে। আজ তিনি এখানে বেশ পরিচিত এক নাম। অনেকগুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত মৌ –এর অভিজ্ঞতার

ঝুলি ঈর্ষণীয় রকমের বড়। কবিতার সাথে নিবিড় প্রেম আর অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব মিশেল তার কবিতাগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, “অধরা আইফোন” একুশে বইমেলায় পারিজাত প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে। বইটির শিরোনামেই বেশ একটা চমক আছে বেশ উত্তর আধুনিক। এখন আমরা যারা লিখছি তাদের উপর ফেসবুক নামক এই সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটটির বেশ প্রভাব। এবং মৌ এর বইটিতেও এটা বেশ লক্ষ্যনীয়। বেশ কয়েকটি কবিতা ফেসবুক চ্যাটিং-এর ঢঙ্গে লেখা। শ্রদ্ধেয় মইনুল আহসান সাবের খুবই চমৎকার একটা ভূমিকা লিখেছেন এই বইটির জন্য এবং সেটা কবির কবিতা সম্পর্কে পাঠকদেরকে একটা সম্যক ধারণা দেয়। তিনি কবির শব্দ প্রয়োগ ও রোমান্টিকতার প্রশংসা করেছেন। আমারও একই ধারণা। মৌ- এর নারীবাদী রূপের কথাও বলেছেন তিনি।আমি বলব, এই কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাতেই কবির নারীবাদিতা গতিশীল ভাষা পেয়েছে। “রাত নিবন্ধন”, “রাগ মধুবন্তী”, “কেন হও”, “কি পার্থক্য”, কবিতাগুলো পড়লে পাঠক আমার সঙ্গে একমত হবেন।
তবে কবির রোমান্টিকতাও চোখে পড়ার মতো। প্রেমের জন্য কবির ব্যাকুলতা যে কাউকেই ছুঁয়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে এ বিষয়ে কবির হতাশা ও বঞ্চনার কথাও এসেছে। আধ্যাত্মিক প্রেমের সাথে শারীরিক প্রেমের সম্মিলনের কথাও এসেছে দু এক জায়গায়, অনেকটা ‘ম্যাটাফিজিক্যাল’ কবিরা যেভাবে বলেছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শব্দ বা শব্দকল্পগুলো একটু বেশী খোলামেলা মনে হয়েছে। মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষার আগ্রাসী ভাবটা না হলেও মৌ-এর কবিতা এবং তার আবেদন ঠিকই থাকত বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
মাকে নিয়ে লেখা কবিতা “ব্যক্তিত্বের লেখক” কবিতাটি যে কাউকেই নাড়া দেবে। ‘না’ কবিতায় কবির সমাজ সচেতনতা প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া, বেশ কিছু কবিতায় আমরা স্মৃতিকাতর কবিকে আবিষ্কার করি। বেশীরভাগ কবিতারই একটা নিজস্ব ভাবনা আছে।এজন্যই পাঠক তার কবিতাগুলো উপভোগ করবেন।একইসঙ্গে পাঠক নিজেকেও দু’এক জায়গায় খুঁজে পাবেন। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। এজন্য মৌ-কে ধন্যবাদ দেওয়া অবশ্যকর্তব্য। শুভকামনা কবি এবং তার কাব্যগ্রন্থের জন্য। তার কবিতারা সব রঙ্গীন পাখা মেলুক। বেজে উঠুক “মধুবন্তী রাগের সুর”।
শরীফ হাসান, টরন্টো
(শহা/বি এইচ ৬অক্টোবর২০১৫)