সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভূরাজনৈতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘স্ট্র্যাটফর’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তাদের মতে, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের রাজনৈতিক খেলার মাঠের দর্শক সারিতে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে। সংবিধানের বেশ কয়েকটি সংশোধনীর ফলে সামরিক বাহিনী বৈধভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার সামর্থ্য হারিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা সংসদ নির্বাচন বয়কট করে আওয়ামী লীগকে বিপুল সংখ্যাধিক্যে নির্বাচনে জয়লাভের সুযোগ করে দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বারবার বিরোধী দলের প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সহায়তার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। এসব বিবেচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদের তুলনায় আওয়ামী লীগ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক, অধিকতর শক্তিশালী সন্ত্রাসবিরোধী রেকর্ড ও ঐতিহ্যগতভাবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর শক্তিশালী সংযোগ- এসব কিছু আওয়ামী লীগের ভালো অবস্থান বজায় রাখার পক্ষে অবদান রাখছে। আর সব কিছুর মূলে রয়েছে শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব।

কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক মিল্টন বিশ্বাস ‘শেখ হাসিনা : নেতা ও রাষ্ট্রচিন্তক’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে একটি দেশের অগ্রগতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন। বইটির ১৪টি অধ্যায়- উপক্রমণিকা, মাটি ও মানুষের টানে ঘরে ফেরা, জননেত্রী যখন জনগণের আস্থার প্রতীক, দেশরতেœর ভিশন ও মিশন : শিক্ষা, দুর্নীতি দমন ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রাদর্শ, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, শান্তি প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে রাষ্ট্রনায়ক, পারিবারিক ঔদার্য ও সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট, উপসংহার, পরিশিষ্ট, এক নজরে শেখ হাসিনার জীবনপঞ্জি, গ্রন্থপঞ্জি এবং শেখ হাসিনার ভিশন বা রূপকল্প অনুযায়ী কয়েকটি লক্ষ্য। এই অধ্যায়গুলোতে বিস্তারিত তথ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সবকিছুই উন্মোচিত হয়েছে। এমনকি তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যও স্পষ্ট রেখায় চিহ্নিত। লেখক হিসেবে শেখ হাসিনাকে জানতে হলেও এই গ্রন্থের নবম অধ্যায় পাঠ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে শেখ হাসিনা এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি কেবল বাংলাদেশের তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেই নিয়োজিত নন, তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি টানা ৩৩ বছর ধরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কর্তব্য সম্পাদিত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কর্মধারা বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল নতুন অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার রক্তে রঞ্জিত ইতিহাসের পথ ধরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। গত ৩৩ বছরে তার জীবননাশের জন্য কমপক্ষে ১৯ বার হামলা হয়েছে। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হয়েছিলেন। গৃহে অন্তরীণ, কারানির্যাতন ভোগ, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলেছেন। কোনো হামলা-হুমকি ও বাধা তাঁকে লক্ষ চ্যুত করতে পারেনি। অকুতোভয় সাহসী জননন্দিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই এ দেশ বিশ্বপরিসরে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত। মিল্টন বিশ্বাসের গ্রন্থে এ সবই অনুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শাসন ক্ষমতায় বিশেষত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংসদ বা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনেক নারী রাজনীতিক এসেছেন কিন্তু তারা কেউই কোনো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেননি বা ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দর্শন দাঁড় করাতে সক্ষম হননি। জাতীয় নারী নেতৃত্ব বলতে জোহরা তাজউদ্দীন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম রওশন এরশাদ প্রমুখের নাম বারবার উচ্চারিত হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ হাসিনা সাহসী রাজনীতিক হিসেবেই জনগণের কাছে নমস্য। কারণ তিনি এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য তনয়া হয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করছেন; বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছেন; আবার কখনোবা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছেন। শেখ হাসিনার বহুবর্ণিল জীবনের প্রধান অর্জনের সবই শেখ হাসিনা : নেতা ও রাষ্ট্রচিন্তক গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনায় শেখ হাসিনার নিজের রচনার অংশ সংযুক্ত করে গ্রন্থটির মৌল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা হয়েছে। মিল্টন বিশ্বাসের ভাষা সহজ এবং ঝরঝরে- সাবলীল তাঁর গদ্য। আর অধ্যায়গুলোর সহজ-সরল বিন্যাস সত্যিই পাঠকের জন্য আনন্দদায়ক হবে। উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে মিল্টন বিশ্বাসই প্রথম শেখ হাসিনাকে নিয়ে তথ্যবহুল একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমানকে। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কাম্য।

শেখ হাসিনা : নেতা ও রাষ্ট্রচিন্তক

লেখক : মিল্টন বিশ্বাস

প্রকাশক: দেশ পাবলিকেশন