নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিক ঘোষ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এ্যান্ড ক্লিনিক ২০ দিন পর নওগাঁ সিভিল সার্জন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবারও পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তদন্তের রিপোর্টে কোনই দোষ ধরা পরে নাই এমনকি তার নিজের চোখে দেখা সব কিছুই যেন ভুল। লাইন্সেন্স রিনিউ না করা, ১০ বেডের স্থলে ২৭ বেড পরিচালনা করা বা চিকিৎসার অবহেলার জন্য একাধীক রোগীর মৃত্যু হওয়া।

উল্লেখ্য, নিয়ামতপুর উপজেলার ছালালাপুর গ্রামের মোস্তাফা কামালের স্ত্রী জান্নাতুন ফেরদৌস (৩৫) সন্তান ভুমিষ্ঠের জন্য মহাদেবপুর উপজেলার সদরে পিতা আব্দুল কাদের বাড়িতে আসে। আব্দুল কাদের গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে মহাদেবপুর উপজেলার ঘোসপাড়া মোড়ের ঘোস ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে সিজারিয়ানের জন্য ভর্তি করে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী ক্লিনিক মালিক ডাঃ বিবেকানন্দ ঘোষ পরের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে তার মেয়ের সিজার করে সন্তান ভুমিষ্ঠ করার কথা। কিন্ত সার্জন না থাকায় তিনি তা না করে গর্ভবতী জিন্নাতুনকে জোর করে হাত-পা বেঁধে নরম্যাল ডেলিভ্যারী করার চেষ্টা করে। এতে পেটের মধ্য থেকে নবজাতকের নাড়ি বের করে আনে। অবস্থা বেগতিক দেখে একজন সার্জনকে দিয়ে পরে অপারেশন করে মৃত সন্তান পেট থেকে বের করে।

এই ঘটনায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রসুতির স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ক্লিনিক ঘেরাও করে রাখে।

খবর পেয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা: মোজাহার হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ঘটনাসহ ভুল চিকিৎসায় আরও তিনজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পান।

গত ৪ সেপেপ্টম্বর মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আলিমের স্ত্রী তারা বানুকে (২৫) অপারেশন করার পর রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তার মৃত্যু হয়। ২০ আগষ্ট একই উপজেলার কুশাপুকুর গ্রামের রানা বাবুর স্ত্রী খাদিজা খাতুন (২৪) ঘোষ ক্লিনিকে রক্তের পরীক্ষার জন্য আসলে ও+ পজেটিভ এর স্থলে বি+ পজেটিভ রক্ত রিপোর্ট দেয়।

১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় জেলা সিভিল সার্জন ক্লিনিকটি পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন ১০ বেডের স্থলে ২৭ বেড পরিচালনাসহ নানা অনিয়ম থানায় ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা করেন এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেন।

গত ৬ অক্টোবর সিভিল সার্জন ওই ক্লিনিকে গিয়ে আবারও পরিচালনার জন্য অনুমতি দেওয়ায় এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন নানা অনিয়ম থাকা সত্তেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবারও খুলে দিলো ঘোষ ক্লিনিক।

এছাড়া গত ৪ অক্টোবর জেলার ১৪টি ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- নওগাঁ শহরের যমুনা ক্লিনিক, আহসান জেনারেল হাসপাতাল, জায়েদা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, জমজম ক্লিনিক, বদলগাছি উপজেলার জাহানারা ক্লিনিক, মান্দা উপজেলার মা ক্লিনিক, নিয়ামতপুর উপজেলার সেবা ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোম, রেহানা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আল আমিন ক্লিনিক, হক ক্লিনিক, মহাদেবপুর উপজেলার লিমা ক্লিনিক, পত্নীতলা উপজেলার ইসলামিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আলফা হাসপাতাল ও কল্পনা ক্লিনিক।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডাঃ মোজাহার হোসেনের কাছে মহাদেবপুরের ঘোষ ক্লিনিক পরিচালনা অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই ক্লিনিকের তদন্ত রিপোর্টে কোন দোষ না পাওয়ায় তাকে পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

(এএইচ/এলপিবি/অক্টোবর ১১, ২০১৫)