সমর চক্রবর্তী'র কবিতা
ছোট ছোট দুঃখবোধগুলো
আমাদের ছোট ছোট দুঃখবোধগুলো বিবসনা নগর-শিশুর মতো
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কৃষ্ণপক্ষের রাতের পেয়ালায়;
নিখোঁজ সোনালি চাঁদ পুড়ে যায় জ্যোৎস্নায়,
নৈরাশ্যের দীঘল শুন্যতা গিলে খায় ঝাঁক ঝাঁক অন্ধকারের আগুন!
নগর ভবনে পেণ্ডুলাম দোলে, ঘড়ির বৃত্তে স্থির হয়ে থাকে সময়-
আমরা পেছন ফিরি, অতীতের পোশাকগুলো সেলাই করি,পুনরায়
সম্পর্কের মতো বোতাম এঁটে পরে নেই নতুন আশাক, এবং
রাত্রির নীরবতায় নেমে আসা রহস্যময় উল্কায় খুঁজতে থাকি
আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই নিজস্ব ছায়াগুলোকে-
যারা শেঁকড় গুচ্ছের মতো ডুবে আছে রহস্যের গভীরে-নিঃসঙ্গ অতীতে...
আকাশে আমার
আকাশে আমার ঈদের নতুন চাঁদ
স্থলে খণ্ডিত লাশের চোখ আকুলতা নিয়ে
তাকিয়ে আছে দিগন্তে,
নিসর্গে স্বপ্নে দেখা প্রজাপতিগুলো কখোন যেন
মুখোমুখি এসে বসে গাঢ় বেদনার পর...
রৌদ্র প্রসবের আনন্দে ভোরের সূর্য্য প্রতিদিন লাল!
সন্ধ্যা নামে গ্রামে
সময় চিহ্ন মুছে দিয়ে সকালের রক্তিম সূর্য্য
পুনরায় লাল হয়ে ডুবে যায় সবুজ গম্বুজের আড়ালে
ঘরে ফেরা পাখির ডানার উড়াল আনন্দে সন্ধ্যা নামে গ্রামে
নদীর ওপারে আকাশ দিগন্তে জ্বলে ওঠে থোকা থোকা তারা
পাখির কলকাকলির মতো রমণীদের কলহস্যে দুলে ওঠে পাড়া
যুবতীরা মাতায় যুবক-প্রাণ ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে !
পিচঢালা সড়কে বয়ে যায় শ্রমক্লান্ত মানুষের কলরব
পুরুষের শরীরের ঘ্রাণে কিছু দৃিষ্ট প্রতীক্ষায় এলোমেলো
সামান্য বাতাসে কাঁপে প্রদীপশিখার প্রাণ
খোলা প্রান্তরে বসে কথা বলে যায় কিছু ছায়াশূন্য মানব-মানবী!
শৈশবের আকাশ
ঘাস ফড়িঙয়ের পিছনে ছুটতে ছুটতে ছোট হয়ে গেলো শৈশবের রোদের আকাশ।
দৌঁড়াচ্ছি আমি দৌঁড়াচ্ছি ... না সূর্য্য, তোমাকে দিগন্তে হারিয়ে যেতে দেবো না ...
এই দেখো, পৃথিবীর আকাশের চেয়ে বড় আমার হৃদয়! দিন-রাত্রির মতো আমার
কোনো ভাগাভাগি নেই, অখ- এ নিলীমায় জ্বলে থাকো তুমি স্বপ্রতিভায়-
অগ্নিগিরী
চাঁদের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আকাশটা বড় হয়ে গেলো;
এই নিলীমায় কোনো মেঘ নেই। শূন্যতা ক্রমশ পরিব্যাপ্ত হয়ে
গোপনে কখোন যেন সকল বেদনা তুলে নিয়ে যায়...
আমি দিন-রাত্রির বিভেদ ভুলে প্রদক্ষিণ করি পৃথিবীর চারিপাশ,
ব্লাকহোলের অথই গহ্বরে স্বপ্নের আলোকিতস্রোতে ভেসে ওঠে
নতুন নক্ষত্রের মতো তোমার হারিয়ে যাওয়া মুখ;
আমার স্বপ্নের ব্যসার্ধে জ্যোৎস্নার প্লাবণ, মুছে যায় অমানিশা...
তোমার ভ্রু’র ইশারার মতো আলিঙ্গন আহ্বান জ্বলে ওঠে দিগন্তে
কখোন যেন জেগে ওঠে সুপ্ত অগ্নিগিরী প্ররোচনার অগ্নুৎপাতে