মাহমুদ আরিফ : বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে ধ্বংস করার জন্যে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি যুদ্ধাপরাধী বিচার ব্যবস্থা বানচাল করতে, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে, স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে বাংলাস্তান বানাতে সব ধরনের পরিকল্পনা সম্পন্ন করে আজ তারা মাঠে নেমেছে। সংবিধান থেকে শুরু করে রাজনীতি, ব্যবসা, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন, স্কুল , কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংক এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ তাদের রাজত্ব।

বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই আজ তারা অবস্থান নিয়েছে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলের মাঝেও আজ তাদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হচ্ছে, রাজকাররা আজ স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনীতিবিদদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই ৫৭ ধারা দিয়ে তাকে জেলে ভরে রাখা হচ্ছে। সব কিছু দেখেও বুঝেও আজ আমরা অন্ধ হয়ে বসে আছি। ৫৭ ধরাকে যে তারা ভয় পায় না এটা তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সরকারের নাকের ডগায় বসে আজ তারা সরকারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তারা যা চাইছে পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা ঠিক সেই ভাবেই বক্তব্য প্রদান করছে, শোকে পাথর হয়ে যাওয়া সর্বচ্চো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের সন্তানের মৃত্যুতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কটাক্ষ করে কথার উত্তর দিচ্ছে। এই সব মন্ত্রী নেতাদের নিয়ে দেশ চলেছে উটের পিঠে।

একটু মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ঠিক আগ মুহূর্তে হিন্দু মুসলমানদের যুদ্ধ, ১৯৭১ সনের ২৫এ মার্চের ঠিক আগে আমাদের উপর চলেছিল গুলি, ১৯৭৫এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঠিক আগে চলেছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব, স্বৈরশাসক এরশাদের দেশের শাসন ভার গ্রহণের ঠিক আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল হাজারো বেইমান, বি এন পি সরকার ক্ষমতা আসার ঠিক আগ মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ দখল করে নিয়েছিলো জামাত, কেউ কি মনে রেখেছেন এইসব? স্বাধীনতা বিরোধীদের অবস্থান এখন আগের চাইতেও অনেক অনেক শক্ত, এমন কি তাদের অনেকেই এখন সরকারি দলেও আত্মগোপন করে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে রেখেছে, আজও কি বুঝতে পারছেন না, কেন ৫৭ ধারা দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করা হয়েছে, ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে আর বলতে গেলেই ১৪ বছরের জন্যে শিকের ভেতর ঢুকে যেতে হবে, হিসাব করে দেখেছেন কি কতজন মুক্তমনা লেখককে রাস্তার উপর ঘরের ভেতরে ঢুকে চাপাতির কোপে হত্যা করা হয়েছে? কতজন দেশ দেশান্তরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে?

কতজন মুক্তমনা লেখক, শিক্ষক, ছাত্র, ব্লগার, চিন্তাবিদ, দোকানদার স্বাধীন দেশে স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলেছে? শাহাবাগের আন্দোলনকারী তরুণদের কেন নাস্তিক উপাধি দিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে? আপনি জানেন কি আজ অনেকেই জীবন বাঁচানোর জন্যে চাকরি করা ছেড়ে দিয়েছে ? ছেলে মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করিয়ে দিয়েছে ? নিরাপত্তা হীনতা, বিচারহীনতা আজ আমাদের সমাজের একটি স্বাভাবিক রূপ, তাই জাগৃতি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের বাবা বিচার চাইতে নারাজ, রাজনীতিবিদরা লজ্জাহীন ভাবে দীপনের বাবার উক্তিকে কটাক্ষ করছে, দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন এত বড় আস্পর্ধা এই লোক পায় কি ভাবে? পেছনে কি শক্তি কাজ করছে ? এই লোক কি সেই লোক যিনি রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে জামায়াত শিবিরের ধর্মান্ধদের একটি স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলে ভিড়িয়ে ছিলেন?

৭২ এর সংবিধান এখন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে, দেশের সংবিধান ও রাজনীতিতে তারা শক্ত অবস্থানে বসে যাচ্ছে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলের ভেতর থেকে তাদের খুঁজে বের করতে না পারলে আজ এই সরকার কে আমার হারিয়ে ফেলবো, দেশের অবস্থা এক ভয়াবহ রূপ নেবে. হিজাব ছাড়া মহিলাদের রাস্তার উপর বেত্রাঘাতে ক্ষত বিক্ষত করা হবে, তাদের গায়ে আগুন দিয়ে অথবা পাথর নিক্ষেপ করে অথবা গনিমতের মাল হিসাবে মেরে ফেলা হবে, শাফি হুজুররা দেশের বিচার কর্মের ভার নেবে, শাস্তি দেবার নামে রাস্তার মোরে মোরে তৈরি হবে ফাঁসির মঞ্চ। গায়ের কাপড় খুলে বিধর্মীদের সনাক্ত করা হবে, আপনারা কি এখনো বুঝতে পারছেন না বাংলাদেশকে নতুন তালেবানি রাষ্ট্র বানাবার জন্যে আজ তারা সর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে, জয় বাংলা বলার অপরাধে মানুষ জেল খাটবে, আমি বলি কি তারপর কি হবে ... সবাইকে মনে রাখতে হবে স্বাধীনতার চার মূল নীতি গণতন্ত্র , সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর জাতীয়তাবাদ। একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবুন আমরা এর একটাও কি রক্ষা করতে পেরেছি বা পারছি? আসুন রুখে দাঁড়াই। আমাদের স্লোগান জয় বাংলা, এই স্লোগান ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা হয়েছে, তাই আসুন জয় বাংলা স্লোগানকে রক্ষা করি।

লেখক- সুইডেন প্রবাসী।