খুলনা প্রতিনিধি: ২০১৩ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগর ভবনকে ‘নাগরিক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারসহ ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। নাগরিক শাসন প্রতিষ্ঠা, নাগরিক পরিকল্পনা প্রবর্তন, নাগরিক মর্যাদা ও সম্মান সংরক্ষণসহ ২১ দফা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও দুই বছর এক মাস আট দিনে বিদায় নিতে হলো তাকে।

মনির দেওয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই থেকেছে অধরা, উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন খুলনার নাগরিকরা। ফলে ব্যর্থতা আর গ্লানি কাঁধে নিয়ে ফিরলেন খুলনার বরখাস্তকৃত এ মেয়র।

সোমবার (০২ নভেম্বর) খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে প্রজ্ঞাপন জারি করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় এ প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন এক ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়েছে।

মনির ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে খুলনা মহানগরীতে নাগরিক শাসন প্রতিষ্ঠা, নাগরিক পরিকল্পনার প্রবর্তন, নাগরিক মর্যাদা ও সম্মান সংরক্ষণ, মাদকবিরোধী খুলনা গড়া, গুণিজন সম্মাননা প্রদান, সম্প্রদায়গত সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ, শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি সহায়ক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, শহরবাসীর স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পার্ক, উদ্যান ও বৃক্ষ সংরক্ষণ, ক্রীড়া, বিনোদন ও শরীর চর্চার সুযোগ সৃষ্টি, ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ, সড়ক উন্নয়ন ও বর্জ্য-বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, খালিশপুরে শিল্পাঞ্চল পুনরুজ্জীবনের পদক্ষেপ গ্রহণ, শিল্প ও কলকারখানা স্থাপনে সহযোগিতা প্রদান, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় ভূমিকা গ্রহণ, সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণ, ক্ষুদ্র যানবাহনে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।

অভিযোগ রয়েছে, দুই বছর এক মাস আট দিনেও সিটি মেয়র উদ্যোগ না নেওয়ায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২২টি খালসহ বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত হয়নি। নগরীকে যানজটমুক্ত করা, ক্ষুদ্র যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগও নেননি তিনি। এমনকি নিয়মিত নগর ভবনেও আসেননি তিনি। তবে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ ধরে রাখতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রতিনিয়ত তার অংশগ্রহণ ছিলো সক্রিয়। যে কারণে তার বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি মামলাও দায়ের হয়। আর সে মামলাই কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য।

নগরীর রয়েলের মোড় এলাকার বাসিন্দা সোহান জানান, মহানগরীর সড়ক উন্নয়ন ও বর্জ্য-বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে মেয়র ছিলেন ব্যর্থ। গৃহীত কাজের ধীরগতিতে নাগরিকদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কোনো কোনো ড্রেন, সড়ক মাসের পর মাস খুঁড়ে রাখা হলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। সঠিক তদারকি না হওয়ায় উন্নয়নমূলক কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিলো বার বার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর অভিযোগ করে বলেন, মনি মেয়র হবার পর নাগরিক সেবা থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত ছিলেন নগরবাসী। যে কারণে কাউন্সিলরদের অধিকাংশও মেয়রের কর্মকাণ্ডে ছিলেন নাখোশ।

বাগমারা এলাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, মনি ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেক আন্দোলন করলেও মেয়র তা আমলে নেননি। এছাড়া মশক নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রদের বেশ তৎপরতা ছিলো,মনির সময়ে যা লক্ষ্য করা যায়নি। মনি বরখাস্ত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

স্কুলশিক্ষক আলামিন বলেন, শহরবাসীর বিনোদনের পার্কগুলো বেহালদশায় রয়েছে। গোলকমনি শিশু পার্ক, সোনাডাঙ্গা আবাসিক পার্ক, মুজগুন্নী পার্কসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী। গোলকমণি শিশুপাকর্কে ঠিকাদারের নির্মাণ সামগ্রী রাখতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সড়ক বাতির স্বল্পতা, মশা নিধনে কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছিলো। নগরীতে বিচরণকারী হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও ভিখারী পুনর্বাসনে সিটি মেয়রের নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দুই বছরেও কোনো উদ্যোগ দেখতে পাননি নগরবাসী।
তার মতে, ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে বরখাস্ত হয়েছেন খুলনার সিটি মেয়র মনি।

২০১৩ সালের ১৫ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

মনিরুজ্জামান মনির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(ওএস/এসসি/নবেম্বর০৩,২০১৫)