শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুরে মাংস ব্যবসায়ীদের তদারকি করার কেউ নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রতিদিন জবাই হচ্ছে গবাদি পশু।

গ্রাম থেকে অসুস্থ্য গরু সংগ্রহ করে সেই গরুর মাংস বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি দেখভাল করার কেউ না থাকায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ্য গরুর মাংস খাচ্ছে মানুষ।
জেলার মাংস ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার সকল হাট বাজার গুলোতেই মাংসের দোকান রয়েছে। এই ব্যবসার সাথে জরিতদের সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানেনা। নিয়ম অনুযায়ী গবাদি পশু জবাই করার আগে প্রানী সম্পদ বিভাগের লোকদের পশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার করে নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য সরকারি কোন লোকজন ব্যবসায়ীদের কাছে না যাওয়ায় ইচ্ছে মতই ব্যবসায়ীরা গরু-ছাগল জবাই করে বাজারে বিক্রি করছেন।
সম্প্রতি জেলার গঙ্গানগড় বাজারে অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী কষাই কালাম ঢালীর দোকান বন্ধ করে দেয় বাজার কমিটি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর পর অদৃশ্য কারনে পূনরায় মাংস বিক্রি শুরু করে কালাম ঢালী।
গঙ্গানগর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয়রা জানান, গত ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে ছোটমুলনা গ্রামের মোসলেম পাঠান (৫০) নামে এক ব্যাক্তির গরু অসুস্থ হয়। তখন স্থানীরা গরুটি জবাই করে খাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিলে গরুর শরীরে বিভিন্ন স্থানে মাংসে পচন ধরায় এলাকার লোক ওই জবাই করা গরু ফেলে দেয়। পরে গঙ্গানগড় বাজারের মাংস ব্যাবসায়ী কষাই কালাম ঢালী খবর পেয়ে ফেলে দেয়া গরুর মাংস বাজারে তার দোকানে নিয়ে বিক্রি করে।
গঙ্গানগর বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম কাজী তার কাছ থেকে প্রতিদিনের মত ১৫ কেজি মাংস কিনে নেয়। মাংসে পচন ধরায় সে ওই মাংস হোটেলে রান্না না করে বিষয়টি বাজার পরিচালনা কমিটিকে জানান। এরপর বাজার কমিটি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কালামের মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় চিকন্দি পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের জানানো হয়। পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে। তার কয়েকদিন পর আবার বহাল তবিয়তে মাংস বিক্রি করতে শুরু করে কালাম ঢালী।
শুধু গঙ্গানগর বাজারেই নয়, অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে জেলার ছোট বড় ১ শত ২০টি হাজারের কোথাও পশু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় না।
গঙ্গানগড় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক কাজী বলেন, দির্ঘ দিন থেকেই কষাই কালাম গ্রাম থেকে অসুস্থ্য গরু কিনে এনে বাজারে মাংস বিক্রি করছে। সম্প্রতি শৌলপাড়া গ্রামচিকন্দি মান্নান খানের তড়কা রোগ আক্রান্ত একটি অসুস্থ্য গরু কিনে আনার কিছুক্ষন পর গরুটি মারা যায়। ওই মৃত গরু জবাই করার সময় বাজারের লোকজন দেখে ফেলায় সেই গরুর মাংস তারা বিক্রি করতে পারেনি। খাবার অনুপযোগী মাংস বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরে আমরা তার মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে বলি। ঘটনাটি আমরা চিকন্দি পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জকে জানাই। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে। কয়েকদিন পরে আবার সে দোকানে মাংস বিক্রি করতে শুরু হয়।
এব্যাপারে কষাই কালাম ঢালীর সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠো ফোনে তিনি বলেন, আমি মরা-অসুস্থ্য গরু কখনো বিক্রি করি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আঙ্গারিয়া বাজারের এক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, গুরু জবাই করার আগে সরকারি লোক এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ আসেনা।
সদর উপজেলার চিকন্দী ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মহিদুল ইসলাম বলেন, গঙ্গানগর বাজারের ঘটনাটি শোনার পরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়ে উর্দ্ধতনদের জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপরে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমার জানা নেই।
শরীয়তপুরের জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন চাকলাদার বলেন, মাংস বিক্রেতারা নির্ধারিত জবাই খানায় নিয়ে পশু জবাই করেনা। তাছারা জবাই খানার সংখ্যাও অপ্রতুল। তাই নিয়ম থাকলেও আমাদের লোকবলের অভাবে পশু জবাইর পূর্বে নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্ভব হয়না।

(কেএনআই/এনএস/নভেম্বর০৩, ২০১৫)