স্টাফ রিপোর্টার : রামিন পড়ে ক্লাস সিক্সে। বাসা কলাবাগানের ডলফিন গলিতে। ক্লাসে তাদের একটি দল আছে। নাম ব্লু-ড্রাগন। প্রতিদিন বিকেলে ব্লু-ড্রাগনের সদস্যরা মিলিত হত পাড়ার মাঠে।

এরপর তারা দু’দলে ভাগ হয়ে ক্রিকেট খেলে। রোজকার নিয়ম এটি। অনেক সময় অন্য মহল্লার দলের সাথেও খেলা থাকে। হার-জিতের আনন্দ-বেদনার মধ্যেই বেড়ে উঠছিল তারা। হঠাৎ একদিন বিকেলে তারা দেখলো মাঠের মূল গেট বন্ধ। চারদিকে বেড়া।

গেটের দারোয়ান জানালো, ভেতরে কি যেন কাজ হবে এজন্য আপাতত খেলা বন্ধ। কবে শেষ হবে তা সে জানে না। বিকেলের খেলাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রামিনের মনটা ভালো না। বাবা-মা অন্য কোথাও যেতে দেয় না। ইট-পাথরের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে ছোট্ট রামিন।

রামিন তো তাও মাঠে গিয়ে খেলাধুলার কিছুটা সুযোগ পেয়েছিল। সিরাতের অবস্থা আরো খারাপ। নামকরা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড-থ্রি-তে পড়ে সে। তারা যে এলাকায় থাকে সেখানে কোন খেলার মাঠ নেই। স্কুলের কংক্রিটের বাস্কেটবল কোটটি ফাঁকা থাকলে একটু খেলতে পারে। স্কুল-বাসা-স্কুল আর মাঝে মধ্যে মা-বাবার সাথে শপিংমলের মাঝে ঘুরপাক খায় তার জীবন।

মা-বাবা-চাচাদের বলতে শোনা যায় যে, ছোটবেলার অমুকের সাথে খেলতাম। পরিবারের পরেই খেলাধুলা সামজিকীকরণের একটি বড় মাধ্যম। আর এই মাধ্যম কার্যকর করার জন্য দরকার পর্যাপ্তসংখ্যক মাঠ। আগেকার দিনে পাড়ায় পাড়ায় মাঠ ছিল। খেলার বিভিন্ন দল ছিল। নেতৃত্বের প্রথম বীজটা রোপিত হয় কিন্তু এই খেলার মাঠেই।

এখনো অনেকের শোকেসে দেখা যায় খেলার মাঠ থেকে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া মেডেল, শিল্ড প্রভৃতি। খেলতে খেলতেই মনের মধ্যে তৈরি হয় প্রতিযোতগিতামূলক মনোভাবের। জিততেই হবে এ রকম একটি মানসিকতা তৈরি হতে থাকে যা পরে কাজে লাগে জীবনের নানা ক্ষেত্রে। মাঠ থেকেই তৈরি হয় ক্ষুদে তারকার। মা-বাবার মুখ আলো করে জায়গা করে নেয় জাতীয় দলে।

কিন্তু নগরায়নের আগ্রাসনে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে মাঠগুলো। বড় বড় শহরগুলোতে তা অনেক আগেই অধিকাংশ মাঠ দখল হয়ে গেছে অথবা মানে-বেনামে দলিল করা হয়ে গেছে। এর ছোঁয়া লেগেছে মফস্বলেও। সেখানেও ওঁৎপেতে থাকা ভূমিদস্যুদের রুদ্ররোষের শিকার হচ্ছে নিরীহ মাঠগুলো। নিকট ভবিষ্যতে মফস্বলের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামের ফাঁকা জায়গাগুলোও শিকার হবে এই ভূমি দস্যুদের রোষাণলে এবং নগর পরিকল্পনায় আবশ্যিকভাবে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হবে- এমন কথাও বলা আছে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১তে।

মাঠ-পার্ক ও জলাশয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষায় আইনের অভাব নেই। ২০০০ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনটি সংক্ষেপে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ বলে পরিচিত। এই আইনের বিধান অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেব চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্ত রূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।

আইনের বিধান অনুসারে মাঠের কোন ধরনের বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কার্যক্রম বেআইনী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে মাঠগুলো রক্ষায় আইন মেনে চলতে সবাইকে উদ্যমী ভূমিকা পালন করতে হবে। আর বিদ্যমান আ ইন লঙ্ঘণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

(ওএস/এস/মে ২৬, ২০১৪)