শরতে শীত ও বর্ষা

(উৎসর্গ : পৃথিবীর সকল মাকে)


বড় অসময়ে শীত অনুভব হলো মাঝরাতে!
মাতৃ হস্তে স্বযত্ন সেলাই, মিহিন মমতা
কাঁশফুল গাঁথা পাতলা কাঁথাটা ঘুমঘোরে
উঠে এলো ঘুমগায়ে…

বছর কয়েক আগে, কাফনে মুড়িয়ে, মাকে যারা
রেখে এলো অন্য ভূবনে,
তারা কি জেনেছে আজ এই শরতের মাঝরাতে
আমরা যখন কুয়াশার বদলে বৃষ্টির ছাঁটে ভিজি,
স্বপ্নভঙ্গ আচানক জেগে উঠি ওমের অভাবে,
গুটিশুটি ঘুমের স্বভাবে আতিপাতি খুঁজি জননীশরীর
দুগ্ধগন্ধ নিবিড় পরশ…
নিভৃতে তখন হালকা হাওয়া শুধু
খেলে যায় বিবর্ণ বিষাদে, শীত শিহরণে
তখন তাঁরও সেলাই বিহীন কাশফুল কাপড়ের ভাঁজে, হাঁড়ে
শীত ছুঁয়ে যায় কি না,
সে কথা আমরা যেমন জানি না, তেমনি তিনিও জানেন না
আমরা এখন বিভিন্ন বৃষ্টির জন্য, খুব ভোরে
কাছে কিংবা দূরে, শিউলী কুড়াতে যেতে পারছি না…
একলা ফুলের সাজি আছে শুয়ে
অদেখা কুয়াশাভেজা অন্যরকম শিউলী হয়ে!

ভোরেরও আগে অনাদরে ঝরে যতো ফুল,
অসময়ে গোধূলি রঙ ভেজে মৌন মেঘে,
এইসব দেখে,
ভাসে না এখন আর অসীম আকাশ তোলারঙ জলে;
নির্মল বাতাস গেছে ভরে
গগণবিদারী কালো ধোঁয়া কালো মেঘে!

আশ্বিনের পূর্ণিমায় নক্ষত্র-নক্সী নদীতল
দেখবো আশায় বসে আছি কতোকাল,
তবু এ অকাল বারিপাত, বিকলাঙ্গ অশ্রুপাত,
অকষ্মাৎ নিয়ে যায় হৃদকম্প অসুখের দিকে!
অশুভ সংকেত চারিদিকে, কেবলই বিষাদের সুর,
ষড়ঋতুও গেছে চলে মায়ের মতোন
আমাদের ছেড়ে একা বহুদূর...

আমরা এখন শীতার্দ্র হই অসময়ে,
আমরা এখন বেদনা কুড়াই শিউলীর বদলে ...

আয়নার ভেতর নিবিড় দুঃখ

মমতা-মাতাল বেসামাল নেশা, নিমজ্জ অসুখ
নিয়ে যায় আমারে আজব অন্ধকারে
পাঁজরের হাড়ে পরত পরত ভুল মাটি খুঁড়ে
হামাগুড়ি পথ ঘুরে, ফিরে আসি এ শ্মশান-ঘরে!

মুহূর্তে মোমের আলো যায় নিভে বিষাদ বাতাসে
জ্বলে ওঠে অলীক ওমের গুপ্ত আশা,
অসীম পিপাসা পুড়ে খাক হয় করুণ বিলাপে
কেটে যায় গভীর ঘুমের সুপ্ত নেশা!

একা জেগে থেকে মুখস্থ নির্ভুল ধারাপাত পাঠে
অমিল শূন্যের পিঠে বাড়ে শূন্য ঘর
প্রার্থনার তালিকায় শুধু অবহেলা, কাঁটা চিহ্ন
তামাশা-পুতুল খেলা করে রাতভর!

ভোরের আবছা আলো আনে সুখবার্তা অনাবিল
নিমগ্ন পাখির সুর, প্রাণ জাগে গানে,
অথচ, আমার আয়নার ভেতর নিবিড় দুঃখ
খেলা করে অচেনা অদ্ভুত মায়াটানে...