লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিচু চাষে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আর এই উদ্যোগের পথিকৃৎ কৃষক মো. আবদুল হামিদ। ৮০ বছর বয়সী সফল এই কৃষক লিচু চাষ করছেন প্রায় ৪১ বছর ধরে।

বাণিজিকভাবে লিচু চাষ করে তিনি যেমন নিজের ভাগ্য ফিরিয়েছেন, তেমনি অন্যের ভাগ্য পরিবর্তনেও সহযোগিতা করেছেন।

বয়স থামাতে পারেনি লিচু চাষি আবদুল হামিদকে। এখনো তিনি লিচু চাষের প্রতি অনেক মনোযোগী। তার নিজের প্রায় তিন একর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে ১৩০টি। এসব দেখাশোনা ছাড়াও অন্যের জমিতে তিনি লিচুর বাগান তৈরিতে সহায়তা করে থাকেন। এ পর্যন্ত তার হাতের ছোঁয়া পেয়েছে ৭০০ লিচু বাগান। এসব বাগানে তার হাতের তৈরি লিচুর কলম রয়েছে। তাতে অনেক চারা তিনি নিজে রোপণ করে দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধানও করেছেন।
লিচু চাষে অভিজ্ঞ এই আবদুল হামিদের সাফল্যের কথা লালমনিরহাটের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় লিচু চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা এক নামেই তাকে চেনেন।

আবদুল হামিদ জানান, তার পৈত্রিক ভিটার জমি ছিল উচুঁতে। আশপাশের জমি বেলে মাটির হওয়ায় ধান, পাট, সবজি হতো কম। তাই একদিন সকলের কথা উপেক্ষা করে তিনি লিচুর চাষ শুরু করেন। প্রথমে বসতভিটার জমিতে কয়েকটি লিচুর বীজের চারা রোপন করেন। তাতে দু’টি গাছ বেঁচে থাকে। কয়েক বছর পর গাছ দু’টিতে লিচু আসে। লিচুর স্বাদ ও ফলন হয় খুব ভালো। সেই থেকে শুরু-- সেটা ১৯৭২ সাল। সেই যে লিচু চাষের নেশা তাকে পেয়ে বসে, তা ২০১৪ সালে ৮০ বছর বয়সেও থামাতে পারেনি তাকে।

লিচু চাষী মো. আবদুল হামিদের বাড়ি লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলেমিটার দূরে মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামে। মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান জানান, তার বড় ভাই আবদুল হামিদ এই জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিচু চাষ শুরু করেন। তার সাফল্যের কারণে এলাকায় অনেক লিচু বাগান গড়ে উঠেছে।

বর্তমানে প্রায় ৩ একর জমিতে পৃথক পৃথক তিনটি লিচু বাগান রয়েছে আবদুল হামিদের। এসব বাগানে বিভিন্ন জাতের চায়না-থ্রি, চায়না-টু, বোম্বাই, মাদ্রাজি, মোজাফ্ফরপুরী, কাঠ মাদ্রাজি, সিতাপট্টিসহ দেশীয় জাতের ১৩০টি লিচু গাছ রয়েছে। তার বাগানে লিচু গাছের পাশাপাশি আম, জামসহ নানা জাতের ফল গাছও আছে।

আবদুল হামিদ জানান, এবছর শুধুমাত্র লিচু বাগান থেকেই তার প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর ৫/৭ হাজার লিচুর কলম চারা উৎপাদন করা হয় তার বাগান থেকে। এতেও বছরে তার লাখ টাকার মতো আয় হয়। এবারও এমন আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।

লিচু চাষে ব্যাপক সাফল্যের পরও খ্যাতিমান এই লিচু চাষি আবদুল হামিদের মধ্যে একটু হতাশা আছে। তিনি জানান, লিচু চাষে তার অনেক ভূমিকা থাকলেও আজ পর্যন্ত তার কোন স্বীকৃতি মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী, এমপি, আমলারা তার বাগান পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তার সাফল্যের সরকারি কোন স্বীকৃতি এখনও পাননি তিনি। এমনকি প্রতিবছর জেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগান পরিদর্শন করে গেলেও তার কোন স্বীকৃতি জুটেনি। এতে তার দুঃখ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি কর্মকর্তা সাফাহাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষক আবদুল হামিদের লিচু বাগান খুবই সুন্দর। এই কৃষক কেন তার স্বীকৃতি পাননি তা আমার জানা নেই। তবে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে লিচু চাষ বৃদ্ধিতে তার অনেক অবদান রয়েছে।

(ওএস/এস/মে ২৬, ২০১৪)