মুর্শিদ-উল-আলম এর ছড়া
খোকার পড়া
খোকন যখন পড়তে বসে
ডাহুক ডাকে বাগানে
ও ডাক যেনো সুর-লহরী
মন ছুটে যায় সে গানে।
খোকার যখন পড়ার সময়
আম্মু বসেন চেয়ারে
পড়া ছেড়ে যায় কি দেখা
সেই বাগানের কেয়ারে!
হুতুম পেঁচা উঠলে ডেকে
খোকন থাকে ভয়েতে
নয়ের নামতা ছেড়ে দিয়ে
চলে আসে ছয়েতে।
শিয়ালমশাই করুণ স্বরে
যেই না ধরে কান্না
দাদু বলেন, যারে খোকা-
কানটা ধরে আন্্না!
খোকন বলে- জানো দাদু
এই শিয়ালটা বিশাল
সাবাড় করে ন’শ মোরগ
খোঁয়াড় থেকে ফি-সাল।
এমন আজব গপ্প শুনে
আম্মু রাঙান চোখ
খোকন বলে ভাল্লাগেনা-
শুধুই গেলে ঢোক।
আম্মু তখন মাথার পরে
দেন বুলিয়ে হাতটা
মন লাগিয়ে পড়ে খোকা
মধুর লাগে রাতটা!
হাড় কাঁপানো শীতের চোটে
হাড় কাঁপানো শীতের চোটে
হাঁড় কি কাঁপে মোটেও?
কাঁপন ধরে সারা দেহে
এমন কি দু'ঠোটেও।
ছেলে বুড়ো সবাই কাঁপে
কাঁপে কি ভাই গ-ারে?
জলহস্তীর ভাব হ'ল এই
কি আর এমন ঠা-ারে!
তাই তো ওরা পানির ভিতর
থাকে যে নাক ডুবিয়ে
শীত না হলে আচ্ছা রকম
দিতাম ওদের চুবিয়ে।
ধ্যুত্তরি ছাই! ভোঁদড় ব্যাটা
পুচকে হলে কি হবে?
এমন শীতেও সাঁতার কাটে
হায় হুতাশহীন নীরবে।
ঐ দেখনা ফুটলো সেদিন
নানান রঙের হাঁসের চা।
ভাপ উড়ানো পানির ভিতর
দেখো কেমন নাচায় পা।
লম্বা গলা পানকৌড়ি যে
এদিক সেদিক দেখে খুব
তারপরেতো ধপাস্ করে
দারুণ শীতেও মারে ডুব।
মাছরাঙাটা এমন শীতে
মাঝে মাঝে পানিতে
যেই-না দেখে পাবদা পুঁটি
ঝাঁপিয়ে পড়ে আনিতে।
ওরা হলো পশুপাখি
বোধ-বুদ্ধি ভিন্ন
আমরা যেন না হই কভু
জ্ঞানবুদ্ধি ছিন্ন।
এমন শীতের কাছে যারা
হয়েছে আজ নিরুপায়
তাদের পাশে থাকব সবাই
কিন্তু তা নয় ভীরু পায়।
পাখির হাসি
ওই ডালে ফুল আছে
এই ডালে পাখি
ওই ফুলে মধুকর
করে ডাকাডাকি।
পাখি দেখে তার পাশে
লতা পাতা ফুল
দোল খায় হেলে দুলে
খুশি যে বিপুল।
পাখি তাই উড়ে যায়
দূর কোনো গাঁয়
সেখানেও সকলেরে
হাসি মুখে পায়।
বলো দেখি কেনো এরা
এতো সুখে আছে?
আমার তো নেই সুখ
থাকি কত কাছে?
হায়! কেনো সুখী হতে
চায় এই মন!
সুরে সুরে গান ধরে
হেসে ওঠে বন।
ঘাসি দিতে চায় পাখি
নেই তার দাঁত
খুশি হয়ে গেয়ে ওঠে
হামদ আর না’ত।
হাসি ছাড়া খুশি যে কি
যায় নাতো বোঝা
মনে মনে হেসে দেখে
হাসি খুব সোজা
অবশেষে রাত এলো
হ’ল নিজ্ঝুম
হাসি-খুশি পাখিটার
চোখে এলো ঘুম।
আকাশ কুসুম
তোলারাম কলেজের ঐ ডেলানাথ বাবু
ছুঁতে গিয়ে গগন হয়েছেন কাবু।
জোনাকিরা উড়ে যায় দূরে নিশি বেলা
ডানা মেলে উড়ে পাখি আজব খেলা।
উড়োযান উড্ডয়ন করে মহাকাশে
উনি কেন বসে র'বেন মাটির পাশে?
ছুঁতে হবে আকাশ এ তার অভিলাষ
যেই ভাবা সেই কাজ, নয় কোন হাসফাস।
মাটিতে ঘা মেরে পায়ে উর্ধ্বে উঠে
ক্ষণ পরে পড়ে মাটির উপর লুটে।
হাত পা হাড় ভাঙে মাথা যায় ফেটে
জিভটা কেটে গেল দাঁতে দাঁত এঁটে।
বান
বান এসেছে বান এসেছে
ডুবে উঠান ঘর
মানও ডুবে জানও ডুবে
ডুবে আপন পর।
পথ হারাল ঘাট হারাল
ফসল গেল কই?
এক আসরে ঠাঁই নিয়েছে
রুই কাতলা কই!
বানটা বড় সর্বনাশা
ঠিকানা তার নাই?
হিমালয়টা বলে বন্যা
ফারাক্কারই ভাই!
ফারাক্কাটা বোবার মত
কাটে গ্রীষ্মকাল
বর্ষা এলে খোলে উহার
বাহাত্তরটা গাল।
যে যা-ই বলে বলতে পারে
আমরা বলি ভাই
থাকলে পাশে দুর্গতদের
খানিক স্বস্তি পাই।
মাছরাঙা
মাছরাঙা যেই ঝাঁপ দিয়েছে
লাফ দিয়েছে মাছ,
দেখেই হেসে কুটিকুটি
কদম ফুলের গাছ।
বৃষ্টি ঝরে সারাটা দিন
কদম ফুলের ঘ্রাণ
ঝোরার মাঝে যায় এগিয়ে
কই মাছের উজান।
মাছরাঙা যেই মাছ ধরেছে
উঠল বসে ডালে
বৃষ্টিভেজা কদম পাতা
দোলে হালকা চালে।
মাছরাঙাটা আবার উড়ে
আবার ধরে মাছ
তাইনা দেখে বেজায় খুশি
কদম ফুলের গাছ।
পাখির রঙ
বকের গায়ে এত্তো সাদা
কাকের গায়ে কালো
টিয়ের গায়ের সবুজ বরণ
প্রাণে আঁকে আলো।
হলদে পাখির হলুদ বরণ
দোয়েল কালো-সাদা
মাছরাঙাটার সবুজ ও লাল
রক্তচূড়ার ধাঁধা।
নানান রঙের পাখপাখালি
আমার দেশে আছে
তাদের হরেক রঙের বাহার
মন কেড়ে নেয় কাছে।