নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় অবস্থিত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী গার্মেন্টের শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বুধবার সকাল থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে যেই নারী শ্রমিকদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষের সৃষ্টি সেই নারী শ্রমিক রাশিদার পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরন। সেই সাথে কাজ ফেলে গত ৩ দিনের আন্দোলনের যে ২৪ ঘণ্টা কর্মঘন্টা নষ্ট হয়েছে আগামী দুই সপ্তাহে অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেই ক্ষতি শ্রমিকেরা পূরণ করে দিলে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ওই ৩ দিনের বেতনের টাকাও পরিশোধ করে দিবে।

মঙ্গলবার(১০ নভেম্বর) দুপুর ১টায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত বিকেএমইএ প্রধান কার্যালয়ে বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের কর্মকর্তা, শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সাথে যৌথ আলোচনা সভায় বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান এ সিদ্ধান্ত দেন। সেলিম ওসমানের এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের চলমান শ্রমিক অসন্তোষের অবসান ঘটে।

মৃত নারী শ্রমিক রাশিদার পরিবারকে দেওয়া ৫ লাখ টাকার মধ্যে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হবে ৩লাখ টাকা। আর বাকি ২ লাখ টাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রদান করলে তা নিহত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদত্ত ৩ লাখ টাকা মৃত রাশিদার মা বাবার নামে ব্যাংকে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে টাকাটা এফডিআর করে দেওয়া হবে। এফডিআর থেকে যে টাকা লভ্যাংশ আসবে সেটা মাসে মাসে রাশিদার মা-বাবা তুলে নিবে। আর এফডিআর করা ৩ লাখ টাকা তুলতে গেলে রাশিদার মা-বাবা উভয়ে সহ বিকেএমইএ এর কাছে অনুমতি চেয়ে নিবে।

সেলিম ওসমানের এমন সিদ্ধান্তে মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সাথে কুমুদিনী গার্মেন্টে কর্মরত শ্রমিকেরা নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

আলোচনা সভায় সেলিম ওসমান সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন মানুষের মৃত্যু যে কোন সময় হতে পারে না। আর নারী শ্রমিক রাশিদার মৃত্যুটি ছিল স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু সম্প্রতি এন আর গ্রুপ ও কুমুদিনী নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের বিচলিত করছে। ঢাকায় এবং রংপুরে দুইজন বিদেশী নাগরিক হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে নারায়ণগঞ্জের এই দুটি ঘটনাও উদ্দেশ মূলকভাবে ঘটানো হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। যারা শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন তারাও অনেক সময় শ্রমিকদের কান্নাকাটি দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারেন না রাস্তায় নেমে পড়েন।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের প্রতি আহবান রেখে সেলিম ওসমান বলেন, কোন অবস্থাতেই শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নামা যাবে না। যত সমস্যার সৃষ্টি হোক না কেন আগে বিকেএমইএ এর সাথে আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করতে হবে। যদি বিকেএমইএ অফিস খোলা না থাকে তাহলে শিল্প পুলিশের কাছে যাবেন। শিল্প পুলিশ মালিকদের জন্য নয় শিল্প পুলিশ শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছে।

যারা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আছেন তারা সব সময় শিল্প পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। প্রত্যেক শ্রমিক নেতা শিল্প পুলিশের সকল কর্মকর্তার নাম্বার নিজেদের সংরক্ষনে রাখবেন। প্রতি এলাকায় একজন করে নেতা সৃষ্টি না করে সবাই একটি প্ল্যাট ফর্মে এসে শ্রমিকদের জন্য কাজ করুন। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ডান-বাম রাজনীতির ভেদাভেদ করবেন।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ রেখে সেলিম ওসমান বলেন, বাংলাদেশে আরএমজি সেক্টরের সাথে ৩৫ লাখ নারী শ্রমিক জড়িত। যে সকল নারীরা একবার অর্থ উপার্জন করার সক্ষমতা অর্জন করে তারা আর ঘরে বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে যদি আরএমজি সেক্টর ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে এই ৩৫ লাখ নারী শ্রমিকের ভবিষ্যত কি হবে? তাই কোন কিছু করার আগে এই ৩৫ লাখ নারী শ্রমিকের কথা তাদের চোখের জলের কথা একবার চিন্তা করবেন।

আলোচনা সভায় সেলিম ওসমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএ সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক, সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, সাবেক সহ সভাপতি এম এ হাতেম, পরিচালক শামীম আহম্মেদ, হুমায়ন কবির খান শিল্পী, শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিচালক(এসপি) শামীমুর রহমান কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের সিও সুজিত কুমার সাহা, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হরি কিশোর দত্ত, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়াকার্স কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাউসার আহম্মেদ পলাশ, ওয়ার্কাস পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন গোলক, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এম এ শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, গার্মেন্টস সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান সুজন প্রমুখ।

(বিএস/অ/নভেম্বর ১০, ২০১৫)