নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খোর্দ্দ নারায়নপুর গ্রামের সেই আলোচিত পল্লী চিকিৎসক এলাকার লোকজনের কাছে ভন্ড কবিরাজ হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম স্বপনকে ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে বুধবার রাতে মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট একেএম তাসকির উজ জামান তাকে এই দণ্ড প্রদান করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। ওইদিন দুপুরে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ.একেএম মোজাহার হোসেন বুলবুল পুলিশের সহযোগিতায় কথিত কবিরাজ খ্যাত ওই পল্লী চিকিৎসককে তার আস্তানা খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের মাজার প্রাঙ্গন থেকে ভুয়া চিকিৎসা, ঝাড়-ফুঁক দেয়ার সময় হাতেনাতে আটক করেন।

জানা গেছে, গত আড়াই বছর থেকে একটি মাজার তৈরী করে এবং তার কিছু অনুসারী দ্বারা খবর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে অপচিকিৎসা করে আসছিলেন এই স্বপন কবিরাজ। অপচিকিৎসা করার সময় রোগীদের মারপিট ও বিভিন্ন ভাবে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।

এব্যাপারে গত কয়েক দিন আগে উপজেলার দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর গ্রামের শুভ ইসলাম ও এলাকাবাসী নওগাঁ জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের সুত্রে জানা যায়, কবিরাজ স্বপনের কাছে আসা রোগীদের জ্বীন, মাসনা ধরেছে বলে পানি পড়া খাওয়াতেন। পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসার নামে রোগীদের মারপিট করা হয়। শেষে ওষুধের কেনাবেচার নাম করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন কবিরাজ স্বপন। তবে স্বপন কবিরাজ সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে রোগীদের পিটানোর যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। তাঁর চিকিৎসার মাধ্যমে জ্বিন-ভূত ধরা অসংখ্য রোগী ভাল হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোজাহার হোসেন বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামে স্বপন কবিরাজের বাড়িতে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীকে জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পারেন, চিকিৎসার নামে স্বপন রোগীদের মারপিট করেন, ঝাড়ফুঁক দেন ও পানি পড়া খাওয়ান। এই কবিরাজ যেভাবে রোগীদের চিকিৎসা করেন এটা সম্পূর্ণ অপচিকিৎসা। সন্ধ্যায় ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহাদেবপুর ইউএনওর কাছে তাকে হস্তান্তর করা হলে রাত ৮টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম তাসকির উজ জামান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম স্বপন কবিরাজকে ভোক্তা অধিকার আইনের ২০০৯ এর ৫৩ ধারায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড- এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে শুক্রবার সকালে স্বপন কবিরাজের অনুসারী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মতিউর রহমানের নেতৃত্বে তার বাড়ির পাশের ৭/৮টি বাড়ির লোকজন ও তাদের ভাড়াটিয়া কিছু লোকজন এনে স্বপনের মুক্তির দাবীতে কবিরাজের বাড়ির খলিয়ানে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। তবে কবিরাজের হাতে গোনা কয়েক জন অনুসারী ছাড়া তার নিজ গ্রামের কোন লোকজন সেখানে উপস্থিত হননি ॥ উল্লেখ্য, কথিত ওই পল্লী চিকিৎসক ও এলাকার লোকজনের মাঝে কবিরাজ হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম স্বপনের ছবিসহ তার অপচিকিৎসার সংবাদ ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল।


(বিএম/এসসি/নবেম্বর২০,২০১৫)