সোনার তরী (এ সময়ের ছড়া)
সুকান্ত ভট্টাচার্য
বিদ্রোহের গান
বেজে উঠল কি সময়ের ঘড়ি?
এসো তবে আজ বিদ্রোহ করি,
আমরা সবাই যে যার প্রহরী
উঠুক ডাক।
উঠুক তুফান মাটিতে পাহাড়ে
জ্বলুক আগুন গরিবের হাড়ে
কোটি করাঘাত পৌঁছোক দ্বারে
ভীরুরা থাক।
মানবো না বাধা, মানবো না ক্ষতি,
চোখে যুদ্ধের দৃঢ় সম্মতি
রুখবে কে আর এ অগ্রগতি,
সাধ্য কার?
রুটি দেবে নাকো? দেবে না অন্ন?
এ লড়াইয়ে তুমি নও প্রসন্ন?
চোখ-রাঙানিকে করি না গণ্য
ধারি না ধার।
খ্যাতির মুখেতে পদাঘাত করি,
গড়ি, আমরা যে বিদ্রোহ গড়ি,
ছিঁড়ি দুহাতের শৃঙ্খলদড়ি,
মৃত্যুপণ।
দিক থেকে দিকে বিদ্রোহ ছোটে,
বসে থাকবার বেলা নেই মোটে,
রক্তে রক্তে লাল হয়ে ওঠে
পূর্বকোণ।
ছিঁড়ি, গোলামির দলিলকে ছিঁড়ি,
বেপরোয়াদের দলে গিয়ে ভিড়ি
খুঁজি কোনখানে স্বর্গের সিঁড়ি,
কোথায় প্রাণ!
দেখব, ওপারে আজো আছে কারা,
খসাব আঘাতে আকাশের তারা,
সারা দুনিয়াকে দেব শেষ নাড়া
ছড়াবো দান।
জানি রক্তের পেছনে ডাকবে সুখের বান।।
রব্বানী চৌধুরী
ছড়ায় গুনতে শিখি
রাজার ছিল একটি হাতি
দুইটি কালো ঘোড়া
রানীর ছিল তিনটি গাভী ...
কপালে দাগ পোড়া !
রাজার ছিল বাঁশের বাঁশি
চারটি পালের নাও
মাল্লা-মাঝি গাইতো গান
শুনতো পাশের গাঁও।
রানীর ছিল পাঁচটি ছেলে
পাঁচ রকমে তাঁরা
রাজারানীর কাছে ছিল
তাঁরাই সূর্য-তারা!
রাজার ছিল ছয়টি গাধা
সবাই টানে বোঝা
সাতটি কাকে করছে কা কা
বুঝবে এতো সোজা?
রানীর ছিল আটটি শাড়ি
অষ্ট রঙে শুনি
পড়াশুনা করবে যারা
তাঁরাই হবে গুনি।
রাজার ছিল নয়টি বাড়ি
নয়টি ছিল পুকুর
রানীর ছিল দশটি পাখি
ডাকে টুকুরটুকুর ।
নাসের মাহুমুদ
প্লাস্টিকের পৃথিবী
প্লাস্টিকের চাল বেরোবে
মেলামাইন ডাল,
একবার তা কিনলে তবে
খাবেন চিরকাল ।
প্লাস্টিকের মাছ মাংস
প্লাস্টিকের ডিমও,
প্লাস্টিকের ফল-ফলাদি
আলু বেগুন শিমও ।
কতো রকম খাবার পাবেন
প্লাস্টিকের ঠেলায়,
সামনে শীতে দেখতে পাবেন
প্লাস্টিকের মেলায়।
প্লাস্টিকে জীবন ঠেকায়
প্লাস্টিকে বাঁচায়,
লৌহমানব বন্দি হবে-
প্লাস্টিকের খাঁচায়।
সুখী আরিফুন নেছা
মেঘের সাথে কথামালা
রাশভারী মেঘ
থমথমে মুখ
চেয়ে আছে ওই
সেই আমার সুখ।
মেঘখানা উড়ে যায়
চাঁদ হাসে ওই
তবু আমি অপলক
চেয়ে থাকি সই।
সই আমার বলে হেসে
চলো সই ঘরে যায়
আমি বলি ওরে মেঘ
ফিরে আয় ফিরে আয়...
মেঘ বলে ফিরবোনা
আমিতো রাশভারী
তবু তুমি ডাকো বলে
না এসে কি বলো পারি...
মিলন সব্যসাচী
বৃষ্টি রোদের খেলা
এই শরতে নদীর খূলে
কাটাই সারা বেলা
আমায় ষিম মুগ্ধ করে
বৃষ্টি রোদের খেলা।
রুম ঝুমা ঝুম বৃষ্টি ঝরে
শিষির গাছের ডালে
ঝুম ঝুমা ঝুম নূপুর বাজে
মিষ্টি মধুর তালে।
মেঘলা আকাশ মেঘে ভরা
মেঘের লুকোচুরি
শরৎ হাওয়ায় ওড়াই আমার
স্বপ্ন রঙিন ঘুড়ি।
নাহার ফরিদ খান
মজার কৈশোর
এক্কা দোক্কা
সাপলুডু ছক্কা
কৈশোর বেলা ।
ছুটছি বেগে
বৈশাখী মেঘে
ভিজেছি বেশ
ঠান্ডার রেশ।
পুতুলের বিয়ে
বচসা তা নিয়ে
মিছিমিছি রান্না
তারপর কান্না।
বৈশাখী মেলাতে
নাগর দোলাতে
মজার কৈশোর
স্মৃতি গাঁথা ভোর।
রোকেয়া ইউসুফ
অবশেষে
নয়টি মাসের যুদ্ধশেষে
আসলো স্বাধীনতা
ঘুচলো জুলুম, জবর দখল
পরের অধীনতা ।
যুদ্ধ করে বীর বাঙালি
জীবন রেখে বাজি
কতক হলো শহীদ তাঁরা
কতক হলো গাজী।
চোখের জলে রক্ত সাগর
পাড়ি দিয়ে এসে
লক্ষ আশার স্বপান পূরণ
হলো অবশেষে।
ফয়সাল শাহ
খোকার ছড়া
পঙ্খীরাজে বীরের বেশে
খোকা যাবে চাঁদের দেশে
পরীর সাথে দেখা করে
যাবে সোজা মেঘের দেশে।
মেঘের ঘরে পরীর রানী
আদর দেবে একটুখানি
আদর পেয়ে খোকন শেষে
ফিরবে আপন সোনার দেশে
নেবে গো মা জড়িয়ে বুকে
খোকনসোনা হাসবে সুখে।
মামুন সিরাজী
শীত বুড়ি আসছে
হিম হিম লাগছে
ঠোঁট দুটো কাঁপছে,
হাঁটু দুটো অবিরাম
ঠক ঠক বাজছে ।
হেলে দুলে হাঁটছে
শীত বুড়ি আসছে,
পাতাগুলো গাছ ছেড়ে
কোথা উড়ে যাচ্ছে?
সূর্যের তেজও যেন
আজ ভয় পাচ্ছে,
হন হন তাই বুঝি
দূরে ছুটে যাচ্ছে ।
সাকিব হোসাইন শাকিল
আমার গ্রাম
সবুজ শ্যামল গ্রামটি
আমার গাছেগাছে পাখি,
পরাণ জুড়ায় গ্রামটি দেখে
জুড়ায় দুটি আঁখি ।
ঝিলিক খ্যালে সোনা রোদ
শিশির ভেজা ঘাসে,
রঙবেরঙে প্রজাপতি
গায়যে চারিপাশে ।
রুপালি এক বিল আছে
গ্রামের শেষ প্রান্তে
শাপলা শালুক পদ্ম পাতা
যায় যে সবাই আনতে ।
আব্দুস সালাম
নবান্নের উৎসবে
ধান কাটতে যায় রে এখন
কাস্তে হাতে কৃষাণে
সোনা ধান হচ্ছে কাটা
মাঠে মাঠে মেশিনে।
কৃষাণীরা ধান ভানছে
রাতটা যে নিস্তব্ধ
চারিদিকে যায় রে শোনা
ধান মাড়ায়ের শব্দ।
কৃষকেরা ভরছে গোলা
হেমন্তের এই অঘ্রাণে
প্রাণটা সবার যায় রে ভরে
পিঠা পুলির সুঘ্রাণে।
পালাগানের জমবে আসর
নবান্নের উৎসবে
রাত জেগে সব দেখবে তা যে
গ্রাম বাংলার লোক সবে।