পঞ্চগড় প্রতিনিধি:পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৫ ছিটমহলের ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারি ১৪ টি পরিবারের ৪৮ জন নাগরিক আজ রবিবার ভারতে চলে গেছেন। আজ সকাল সাড়ে ন‘টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আযম বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে এসব নতুন ভারতীয়দের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান।

জানা গেছে, প্রথম দফায় বিলুপ্ত নাটকটোকা, কাজলদিঘী, বেলুয়াডাঙ্গা ও নাজিরগঞ্জ ছিটমহল থেকে ৫৫ জন ভারতে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত একটি পরিবারের ৪ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং অপর দুটি পরিবারের ৩ সদস্য পরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় শেষ পর্যন্ত ৪৮ জন বিকাল সাড়ে ৩টায় পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। এ সময় সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে স্বজনদের কান্না আর বুক ফাটা আর্তনাদের মধ্য দিয়ে প্রিয়জনদের বিদায় জানানোর দৃশ্য যেমন চোখে পড়ে তেমনি অন্যদিকে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারেই নতুন ভারতীয়দের বরণ করতে আয়োজন করা হয় বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের। উৎসুক জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এর আগে নতুন ভারতীয়দের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের কাষ্টমস আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয় কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। পণ্যবাহী ৩টি ট্রাকে জিনিসপত্রসহ তাদের দুটি বাসে নিয়ে যাওয়া হয় চিলাহাটী ডাঙ্গাপাড়াস্থ আব্দুর রউফ সরকারী প্রাইমারী স্কুল মাঠে। সেখানেই ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করা হয়। এরপর নতুন ৪৮ জন ভারতীয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষে বোদা উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু আউয়াল ভারতের কুচবিহার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আয়শা রানীর নিকট হস্তান্তর করেন। ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জিএম সারওয়ার, নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুজিবুর রহমান, ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা এবং ভারতের বিএসএফের ডেপুটি কমান্ডার একে ঝাঁ উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় নতুন এসব নাগরিকদের উৎসবমুখর পরিবেশে বরণ করতে ভারতীয় অংশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেখলিগঞ্জ-হলদিবাড়ি আসনের বিধায়ক পরেশ অধিকারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিপ্তিমান সেন গুপ্ত।

এদিকে আজ সোমবার (২৩ নভেম্বর) বিভিন্ন ছিটমহলের আরো ৩১টি পরিবারের একজন নবজাতকসহ ১৭৭ জনের ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসব নাগরিক গতরাতেই দেবীগঞ্জের গাজোকাটি বাজার মাঠে সমবেত হন। এছাড়া মঙ্গলবার ২৯টি পরিবারের একজন নবজাতকসহ ১৪৯ জন এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ২৩টি পরিবারের ১০৮ জন নাগিরকের ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আজম বলেন, যারা ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেও সেদেশে যাচ্ছেন না তাদের বিষয়ে পরবর্তির্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আশা করছি, নাগরিকত্ব প্রশ্নে জনগণের মতামতই প্রাধান্য পাবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত যৌথ জনগণনা জরিপে ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ৪৮৭ জন ভারতে যেতে আবেদন করেন। এরমধ্যে নতুন করে দুই নবজাতকের জন্ম হওয়ায় তারাও ভারতে যাচ্ছে। এরা সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। এসব নাগরিককে ভারতে যাওয়ার জন্য গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর ট্রাভেল পাস দেয়া হয়।

(এসএবি/এসসি/নবেম্বর২২,২০১৫)