ফয়সাল শাহ এর গুচ্ছ ছড়া
নানাবাড়ি
নানাবাড়ি নদীর জলে
সকাল বিকাল নৌকা চলে
ভাটির টানে পানি নামে,
ঘাটে গিয়ে নৌকা থামে।
আমিষ জোগায় গ্রামের জেলে,
গরু চরায় রাখাল ছেলে
সাদা বকেরা পাখা মেলে
পাখীরা সব গাছে গাছে
পাখির ছানা ডালে ডালে
ঝড়ের আভাস গ্রীষ্মকালে
বৃষ্টি নামে শ্রাবণমাসে,
কাজলা বিলে শাপলা ভাসে।
কৈ, পুটিমাছ ভাজা খেয়ে
গান গেয়ে যায় চাষির মেয়ে
খোকন সোনা গান যে করে
কাকরা ডাকে কা-কা স্বরে।
বই পড়া
বইয়ের কোনো বিকল্প নাই
সবাই মিলে বই পড়ি ভাই;
বই আমাদের জানতে শেখায়
আইন-কানুন মানতে শেখায়
বই-ই সঠিক পথ দেখায়
বই ছাড়া কে বাঁচতে চায়!
মেধা-মনন-জ্ঞানের বিকাশ
সংস্কৃতি আর ইতিহাস
মনের কালো ঘোচায় বই
বই পড়েই জ্ঞানী হই।
শ্রেষ্ট যারা বই লেখে
দিপ্তি চোখে স্বপ্ন দেখে
বই যে কত সত্যবাহন
পাঠক ছাড়া জানবে ক-জন?
বইয়ের জগৎ জ্ঞানের জগৎ
দেশকে চিনি বই পড়ে
বই না পড়ে সারা জীবন
বোকার মতো রই পড়ে;
বই শিশুদের চোখ খুলে দেয়
সবার সেবা বন্ধু বই
বই পরে তাই নিত্য আমি
জ্ঞানের আলোয় মুদ্ধ হই।
খোকার ছড়া
পঙ্খীরাজে বীরের বেশে
খোকা যাবে চাঁদের দেশে
পরীর সাথে দেখা করে
যাবে সোজা মেঘের দেশে।
মেঘের ঘরে পরীর রানী
আদর দেবে একটুখানি
আদর পেয়ে খোকন শেষে
ফিরবে আপন সোনার দেশে
নেবে গো মা জড়িয়ে বুকে
খোকনসোনা হাসবে সুখে।
খোকার ঠ্যাঙ
ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল
কাজল কালো নদীর জল
ঝনাৎ ঝনাৎ ঝনাৎ ঝন
নদীর ধারে কাশের বন।
ভোমরা করে ভনভন
মশা করে জ্বালাতন
ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ
বিড়াল চাটে খোকার ঠ্যাঙ।
ফুলের বনে
ফুলের বনে ঢুকে দেখি
মৌমাছিদের চাক
আশেপাশে শুনতে পেলাম
খেকশিয়ালের হাঁক;
ফুলের সুভাষ প্রাণের ছোঁয়া
রাতের বেলায় পরীর মেলা
অন্ধকারে জোনাক জ্বলে
সবুজ রংয়ের খেলা;
হঠাৎ করে পরীর সাথে
আমার হলো দেখা;
নিয়ে গেল আকাশ পথে
মানুষ আমি একা।
মেঘের বাড়ি পেরিয়ে শেষে
এলাম ফিরে ঘরে,
ঘুমটি ভেঙে ভোরের আলোয়
মনটা সুখে ভরে।
খোকন যাবে চাঁদের দেশে
চাঁদের দেশে বীরের বেশে
খোকন যাবে হাওয়ায় ভেসে
পরীর সাথে করবে দেখা
পেখম মেলে নাচবে কেকা।
অচিন দেশের স্বপ্ন নিয়ে
ফিরবে খোকন মেঘ ডিঙিয়ে
ফিরেই ঘরে বলবে মাকে;
মাকে ছারা কেমনে থাকে?
পিলপিল খিলখিল
পিলপিল পিপিলিকা নয় বোকা
খিলখিল করে হাসে দুষ্ট খোকা
ঝিকঝিক রেলগাড়ি চলছে বেগে
ঝলমল তারার মেলা জ্বলছে মেঘে
ভোরবেলা পেখম মেলে নাচ্ছে কেকা
খোকাবাবু ইস্কুলে যাচ্ছে একা
রোদ্দুরে চিকচিক করছে বালি
খুকুমনি বকুলফুলে ভরছে ডালি।
ছোট্ট খোকা
খোকা নামের ছোট্ট ছেলে
টুঙ্গীপাড়ার ঝিলের জলে
সাতার কাটে বর্ষা কালে।
সকাল সকাল ইস্কুলে যায়
মনযোগী সে পড়াশোনায়।
কাক ডাকা ভোর সকাল হলে
ঘুম থেকে সে ওঠে পড়ে
বিকেল হলে খেলা করে।
পাড়ার সকল ছেলেরা মিলে
হাডুডুডু ফুটবল খেলে।
খোকা ছিল লক্ষ্মী ছেলে
পড়ার সময় পড়ে ফেলে
সময় মত ঘুমিয়ে পড়ে।
ছোট্ট খোকা বড় হয়ে
সোনার বাংলা স্বাধীন করে।
শরৎ এলেই
শরৎ এলেই মনফুরফুর প্রাণে লাগে ছন্দ
শরৎ এলেই নীল আকাশে শিউলি ফুলের গন্ধ
শরৎ এলেই শিশুর মনে
কল্পনারা স্বপ্ন বোনে
খুশির আমেজ ঘরে ঘরে পাঠশালা যে বন্ধ
শরৎ এলেই মনফুর ফুর প্রাণে লাগে ছন্দ।
শরৎ এলেই সবুজ ঘাসে শিউলি ফুলের হাসি
শরৎ এলেই বটতলাতে রাখাল বাজায় বাঁশি
শরৎ এলেই পদ্মপুুকুর
সাঁতরে মজা সারা দুপুর
শরৎ এলেই দূর্গাদেবীর বিসর্জনের বাঁশি
শরৎ এলেই সবুজ ঘাসে শিউলি ফুলের হাসি।
শরৎ এলেই মেঘের পাখি নীল আকাশে ভাসে
শরৎ এলেই আউস ধান নাচে সবুজ মাঠে মাঠে
শরৎ এলেই তালের পিঠা
ভোর সকালে খেতে মিঠা
শরৎ এলেই গাঁয়ের শিশু খেলে রৌদ্র-জলে
শরৎ এলেই কাশের বনে দস্যি হাওয়া ভাসে।
শরৎ এলেই দূর পাহাড়ে নীল সবুজের খেলা
শরৎ এলেই দামাল ছেলে বায় নদীতে ভেলা
শরৎ এলেই দুপুর বেলা
রংধনুকের রঙের খেলা
শরৎ এলেই সাঁঝবেলাতে চেঁচায় ডাহুকছানা
শরৎ এলে নেই তো কারো হারিয়ে যেতে মানা।